স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করে ও প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎসহ পাচারে জড়িত আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন।
মিঠুর বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে গত ১০ সেপ্টেম্বর মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামান। ওই দিন রাতে তাকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় ঢাকা মহানগর পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক জাকির হোসেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন কৌঁসুলি দেলোয়ার জাহান রুমি। আসামির পক্ষে আইনজীবী শফিকুল ইসলাম রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে রিমান্ড ও জামিনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে মিঠুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
গতকাল শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। দুদকের পক্ষে কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। মিঠুর পক্ষে তার আইনজীবী কে এম ফুরকার আলী রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বলে জানান কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।
মামলায় বলা হয়, মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠু লেরিক্সাকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্রেটের স্বত্বাধিকারী। তিনি বিভিন্ন সময়ে জমি ক্রয়, লিজ, প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, বাড়ি নির্মাণ, শেয়ার ও কোম্পানিতে বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবে অর্থ, স্বর্ণালংকার, আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বেশি সম্পদ অর্জন করেন। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ, পারিবারিক ব্যয়সহ তার মোট সম্পদ ও ব্যয়ের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
ব্যবসা, বাড়ি ও কৃষিজমি থেকে আয়, বেতন-ভাতা, ফার্মের অংশ, ব্যাংক সুদ, নিরাপত্তা জামানতের সুদ এবং বৈদেশিক রেমিট্যান্স মিলিয়ে মিঠুর বৈধ আয় পাওয়া গেছে প্রায় ৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।
২০১৬ সালে প্রকাশিত বহুল আলোচিত পানামা পেপারসে নাম আসে মিঠুর। অভিযোগ রয়েছে, তার মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়নকাজের নামে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন তিনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন