রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

সিএনএনের বিশ্লেষণ

বিশ্বব্যাপী জেন-জি ঐক্যের প্রতীক মাঙ্গা জলদস্যুর পতাকা

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

বিশ্বব্যাপী জেন-জি ঐক্যের প্রতীক মাঙ্গা জলদস্যুর পতাকা

‘আমরা থামব না, আমরা বাধা ভাঙবÑ তারা এটাই বোঝাতে চাইছে।’ তরুণদের হাতে ধরা এই পতাকা নিছক কার্টুন নয়, বরং এক রকম ঘোষণা। গেল সপ্তাহের ঘটনা। জেনারেশন জেড বা ‘জেন-জি’দের আন্দোলনে টালমাটাল হয়ে পড়েছিল নেপাল। আন্দোলনের তীব্রতা সরকার পতনে মোড় নিয়েছে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দিয়েছে দেশের অনেক সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো। সে সময় নেপালের সিংহ দরবারের আগুনের লেলিহান শিখার মাঝেই ভেসে উঠেছিল এক অদ্ভুত দৃশ্যÑ সরকারি ভবনের সোনালি গেটের সামনে উড়ছে জাপানি মাঙ্গা সিরিজ ‘ওয়ান পিস’-এর জলদস্যু পতাকা।

খড়ের টুপি পরা খুলি, মুখে দুষ্টুমিভরা হাসিÑ এই আগুন ও পতাকাকে দূর থেকে একসঙ্গে দেখে মনে হয়েছিল যেন কোনো কমিকস উৎসবের আয়োজন। অথচ সেটি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে জেন-জি আন্দোলনের প্রতীক। তরুণদের হাতে ধরা এই পতাকা নিছক কার্টুন নয়, বরং এক রকম ঘোষণা। তারা বোঝাতে চাইছেÑ ‘আমরা থামব না, আমরা বাধা ভাঙব।’ নেপালে প্রধানমন্ত্রীকে হটানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে এ পতাকা যেন হয়ে উঠেছে বিদ্রোহী মনোভাবের দৃশ্যমান রূপ। তবে কেন এই পতাকা? উত্তর লুকিয়ে আছে ওয়ান পিস-এর নায়ক মানকি ডি. লুফির গল্পে। সে নিজের গ্রাম ছেড়েছে ‘ওয়ান পিস’ নামের অমূল্য ধন খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু তার যাত্রা শুধু ধন-সম্পদ বা ক্ষমতার জন্য নয়Ñ বরং নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য, স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য। পথে সে যাদের নিপীড়িত অবস্থায় দেখে, তাদের মুক্ত করতে এগিয়ে আসে।

যে কেউ শক্তিশালীর দমননীতির শিকার হলে লুফি তাদের পাশে দাঁড়ায়। তার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো কাল্পনিক ‘ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট’Ñ এক বিশাল ক্ষমতাশালী ব্যবস্থা, যা দুর্বলদের দমিয়ে রাখে, স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করে। লুফি সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে তার বুদ্ধি, সাহস আর অসাধারণ শক্তি দিয়ে। এই লড়াই তাই এক ধরনের প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাস্তবের তরুণদের কাছে লুফির হাসি হয়ে উঠেছে তাদের দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। এ প্রসঙ্গে নেপালি সংগঠক বিখ্যাত খত্রি বললেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আন্দোলনটা যেন সত্যিই আমাদের প্রজন্মের হয়। তাই স্লোগান থেকে প্রতীকÑ সব কিছু এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে জেন-জি সহজে সংযোগ খুঁজে পায়। অনেকেই অ্যানিমেশন ভালোবাসে, তাই লুফির পতাকা আমাদের রাগ, আশা আর একতা বোঝানোর সহজ ভাষা।’ এই সহজ ভাষাই এখন সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।

ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন থেকে শুরু করে প্যারিস পর্যন্ত তরুণরা একই পতাকা হাতে নিচ্ছে। মাঙ্গা বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেয়া হরবিনস্কি বলেন, ‘লুফিকে কেউ এড়াতে পারে না। প্রতিকূলতার মাঝেও তার হাসি, লক্ষ্যের দিকে দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাওয়াÑ সবাই এতে নিজেদের দেখতে পায়। তাই এই পতাকা এত সহজে রাজনৈতিক প্রতীকে রূপ নিয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পতাকার শক্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন অধ্যাপক নূররিয়ান্তি জাল্লি বলেন, ‘এই প্রতীকগুলো শব্দ ছাড়াই কথা বলে। নেপালি, ইন্দোনেশীয় বা ফরাসি তরুণেরা হয়তো এক ভাষায় কথা বলে না, কিন্তু লুফির গল্প সবাই বোঝে।’ এই বোঝাপড়াই পতাকাটিকে এক বৈশ্বিক প্রতিরোধচিহ্নে পরিণত করছে। যেমন নেপালে পতাকার পাশে উঠে এসেছে নানান স্লোগানÑ ‘জেন-জি নীরব থাকবে না, তোমার বিলাসিতা আমাদের দুর্দশা! নেপো বেবিজ।’ রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবন দেখিয়ে তরুণেরা বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের ক্ষোভ।

অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ায় পতাকাটি হয়ে উঠেছিল বিতর্কের কেন্দ্র। স্বাধীনতা দিবসের আগে সাধারণ মানুষ পতাকাটি ওড়ালে সরকার তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সঙ্গে তুলনা করে। কর্তৃপক্ষ পতাকা বাজেয়াপ্ত করে, দেয়ালচিত্র মুছে দেয়। কিন্তু তাতে প্রতিবাদ দমে যায়নি। শিল্পী কেমাস মুহাম্মদ ফিরদাউস নিজের হাতে আঁকা জলি রজার শেষ করতে করতে বলেন, ‘এটা সরকারের জন্য সতর্কবার্তা। মানুষ চায় সরকার তাদের আওয়াজ শুনুক।’ শেষ পর্যন্ত লুফির খড়ের টুপি শুধু কাগজে আঁকা নয়, বরং ‘জেন-জি’দের বিদ্রোহী কণ্ঠের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল আর বাস্তব জগত মিলেমিশে এখন একটি নতুন প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করছেÑযেখানে মাঙ্গার কল্পনার জলদস্যুরাই তরুণদের স্বাধীনতার লড়াইকে আলোকিত করছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!