সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি

ফিলিপাইনের ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের আদেশ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

ফিলিপাইনের ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্তের আদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ব্যাংকে থাকা ৮১ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাজেয়াপ্ত করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে এই আদেশ দেন। ফিলিপাইন থেকে প্রাপ্ত মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সসহ রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই রায় দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে আদালতের আদেশ ফিলিপাইনের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সিআইডি ও বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের আশা, ফিলিপাইন এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এবং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা ফিরিয়ে দেবে। তবে কতদিনের মধ্যে অর্থ ফেরত আসবে বা ফিলিপাইনের ব্যাংকটি আদালতের আদেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেছে কি না, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেনি সিআইডি।

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির হেডকোয়ার্টারে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সাইবার জালিয়াতির মাধ্যমে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারে জড়িত ছিল। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত, ফিলিপাইন সরকারের সরবরাহ করা পারস্পরিক আইনি সহায়তা অনুরোধের মাধ্যমে সংগৃহীত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিশেষ আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় আরসিবিসি থেকে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন। 

সিআইডিপ্রধান বলেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে যে, আরসিবিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও লরেঞ্জো ট্যান, জুপিটার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মাইয়া সান্তোস ডিগুইতো এবং ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও জুপিটার ব্রাঞ্চের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ৫টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থ পাচারে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ফিলিপাইনের আদালত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরসিবিসির ওপর বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ করেছে। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আরসিবিসি মাত্র ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দিয়েছিল, যা তাদের পক্ষ থেকে অর্থ ফেরতের প্রথম পদক্ষেপ ছিল। তদন্তে আরও প্রমাণিত হয়েছে, এ ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারা ২৭ অনুযায়ী আরসিবিসি করপোরেট সত্তা হিসেবে সম্পূর্ণভাবে মানিলন্ডারিং অপরাধে জড়িত ছিল।

মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আদালত নির্দেশ দিয়েছেন আরসিবিসি থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া পুরো ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে ফেরত পাঠাতে হবে। এ আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কপি বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। জাতিসংঘের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইম, ফিলিপাইনের আইন এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ সরকার এখন ফিলিপাইন সরকারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবে, যাতে বাজেয়াপ্তের আদেশ কার্যকর হয় এবং পাচার হওয়া অর্থ পুরোপুরি ফেরত আসে। আমরা আশা করি দ্রুত সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ফিরিয়ে আনতে পারব। এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের তদন্ত চলমান। আমার দ্রুত এ মামলার চার্জশিট দেব।

এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, এর আগে ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার ফিলিপাইন থেকে ফেরত এসেছিল। পাঁচজনের নামে যেই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ছিল তার মাধ্যমে পাচার করেছে, এটা প্রমাণিত হয়। ফিলিপাইন সেটা বুঝতে পেরেই ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার ফেরত দেয়। এতে প্রমাণিত হয়, সেখানে টাকা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এতে এটাও প্রমাণ হয়েছে এটা বাংলাদেশের টাকা। ‎এদিকে, রিজার্ভ চুরির টাকা শ্রীলঙ্কাতেও চলে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পেরেছিল এটা মানিলন্ডারিংয়ের টাকা, তখন তারা বাংলাদেশকে টাকা ফিরিয়ে দেয় বলেও জানা তিনি। ‎রিজার্ভ চুরির সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবারের কারোর সংশ্লিষ্টতা আছে কি না জানতে চাইলে সিআইডিপ্রধান বলেন, আমরা তদন্তের শেষ পর্যায়ে আছি। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দেশি-বিদেশি যারাই জড়িত থাকবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তদন্ত শেষ হলে আমরা দ্রুত চার্জশিট জমা দেব আদালতে। এ ঘটনায় জড়িত দেশি-বিদেশি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি, তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে।
‎‎

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী বলেন, সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ আদালত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে পাচার করা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্তের জন্য একটি আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশের অনুলিপি ফিলিপাইনের সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের এ কারণে পাঠানো হয়েছে যাতে আদেশটাকে কার্যকর করার জন্য প্রশাসনিকভাবে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়। এটি পুরোপুরি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে এ টাকা দেশে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ‘ভুয়া তথ্য’ দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে। অল্প সময়ের মধ্যে ওই অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হয়, ফিলরেম মানি রেমিট্যান্স কোম্পানির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রা পেসোর আকারে সেই অর্থ চলে যায় তিনটি ক্যাসিনোর কাছে। 

এর মধ্যে একটি ক্যাসিনোর মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধার করে বাংলাদেশ সরকারকে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও বাকি অর্থ উদ্ধারে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। জুয়ার টেবিলে হাতবদল হয়ে ওই টাকা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেছে, তারও কোনো হদিস মিলছিল না। ওই অবস্থায় রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় আরসিবিসির বিরুদ্ধে নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ওই মামলা চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয় নিউইয়র্কের আদালত। তবে ব্যক্তিগত এখতিয়ার না থাকায় চারজন বিবাদিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অপরদিকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশেও একটি মামলা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা ওই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি গত ৯ বছরেও আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারেনি। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!