সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

৪ দেশে সাইফুজ্জামানের সম্পদের ৫৮২টি নথি পেল দুদক

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম

৪ দেশে সাইফুজ্জামানের সম্পদের ৫৮২টি নথি পেল দুদক

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের ৫৮২টি নথি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায়ও তার সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।  দুদক বলছে, এসব নথিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণও রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে কেনা বাড়ির মালিকানা, ভাড়ার আয় ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানা নথি পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার ভোর পৌনে ৫টার দিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের এসব নথি উদ্ধার করা হয়। প্রায় ২৩ বস্তা সম্পদের নথি উদ্ধার করে দুদক। দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৩ বস্তা নথি প্রথমে আরামিট গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর এগুলো ইউসিবিএল ব্যাংকের চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানের গাড়িচালক মো. ইলিয়াস তালুকদার তার নিজ বাড়িতে (শিকলবাহা ইউনিয়নে) রাখেন। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের কিছু আগে তার বাড়ি থেকে সেগুলো পার্শ্ববর্তী ওসমান তালুকদারের বাড়িতে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই নথি পর্যালোচনা করতে সময় লাগবে। ধাপে ধাপে সব নথি বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ২১ কোটি টাকা লোপাট, আসামি সাইফুজ্জামানসহ ২৫: অন্যদিকে কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ঢাকার কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ব্যাংকটির এমডিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার স্ত্রী ও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিটের জুনিয়র অফিসার মোহাম্মদ মিছবাহুল আলম, হিসাব খোলার পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) সাবেক পরিচালক ইউনুছ আহমদ, আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আখতার মতিন চৌধুরী, এম এ সবুর, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, আসিফুজ্জামান চৌধুরী, রোকসানা জামান চৌধুরী, বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান ও মো. শাহ আলম।

এ ছাড়া ব্যাংকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বজল আহমেদ বাবুল, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শ্রাবন্তী মজুমদার, সাবেক এফএভিপি ও কারওয়ান বাজার শাখার ম্যানেজার (অপারেশন) মোসাদ্দেক মো. ইউসুফ, সাবেক এক্সিকিউটিভ অফিসার মুঝায়োনা সিদ্দিক, সাবেক এভিপি ও ক্রেডিট অফিসার মোহাম্মদ গোলাম রাকিব, ইউসিবির সাবেক এফভিপি ও কারওয়ান বাজার শাখার প্রধান আলমগীর কবিরকে আসামি করা হয়েছে।

ঋণ দিয়ে ৫ প্রতিষ্ঠান থেকেই ২১৩ কোটি টাকা ঘুষ নেন সাইফুজ্জামান: প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়ীদের বাসায় ডেকে এনে ঘুষ আদায়, না দিলে গুম ও ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিÑ এভাবেই ভয়ভীতি দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ঘুষের টাকা তিনি আদায় করতেন নিজের স্ত্রীকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান বানিয়ে, সেই ব্যাংক থেকেই ঋণ অনুমোদন করিয়ে। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে সেই ঋণের অর্থ চেকের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতেন জাবেদকে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এভাবে তিনি মোট ২১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

দুদকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে মামলার সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে এবং কমিশনের অনুমোদনও মিলেছে। দুদক আরও বলছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তে এমন আরও ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে পারে।

তদন্ত নথি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ১১ মে থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইউসিবি পিএলসির চেয়ারম্যান ছিলেন জাবেদের স্ত্রী রুকমীলা জামান। তবে তিনি কার্যত অফিসে যেতেন না। চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে কাজ করতেন জাবেদ নিজেই। ব্যাংকের বোর্ড সভায়ও সভাপতিত্ব করতেন তিনি। রেজল্যুশন লেখা হলে গুলশানের বাসা থেকে তার স্ত্রীর স্বাক্ষর এনে দিতেন পিয়ন। এভাবে স্ত্রীকে নামমাত্র চেয়ারম্যান বানিয়ে পুরো ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন জাবেদ।

প্রথমে ব্যবসায়ীদের ডেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করতেন তিনি। টাকা না দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়া এবং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। পরে নিজেই ব্যবসায়ীদের দিয়ে ঋণের আবেদন করিয়ে সেই টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নিতেন নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন হিসাবে।

থার্মেক্স নেট ইয়ার্ন থেকে ৫২ কোটি টাকা:

২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর ইউসিবির গুলশান কার্যালয়ে ডেকে এমডি আব্দুল কাদের মোল্লার কাছে প্রথমে ৫০ কোটি টাকা দাবি করেন জাবেদ। চাপের মুখে কাদের মোল্লা ২০২১ সালের নভেম্বরের মধ্যে ২৭ কোটি এবং ২০২২ সালের জুলাইয়ে আরও ২৫ কোটি টাকা দেন। এ ঘটনায় কাদের মোল্লা আদালতে মামলা করেছেন এবং তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে।

এইচ এম শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৫৫ কোটি টাকা: ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম ধাপে ৩৫ কোটি, দ্বিতীয় ধাপে ২০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করিয়ে জাবেদ বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে ঘুষ হিসেবে নেন। ওই অর্থ পরে তার মালিকানাধীন আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়ামের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

ওয়াল মার্ট (৫ কোটি টাকা):

২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকা ঋণ পায়। পরে ওই ঋণের অংশ হিসেবে জাবেদের ঘনিষ্ঠ কর্মচারীর হিসাবে ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়। সাইফ পাওয়ারটেক ও ই-ইঞ্জিনিয়ারিং (৪১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা): ২০২০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩৫ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরের পর ২৯টি কিস্তিতে চেক, নগদ ও ভাউচারের মাধ্যমে ঘুষ আদায় করেন জাবেদ।

বেস্ট সার্ভিস লিমিটেড (৬০ কোটি টাকা):

২০২২ সালের জুনে ৬০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনের পর ওই টাকা থেকে নগদ উত্তোলন ও লেনদেনের মাধ্যমে ২১টি ট্রান্সজেকশনে জাবেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট হিসাবে পাঠানো হয়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চারটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নম্বরে কল ঢুকলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!