শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১২:১৯ এএম

ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরলেন দেবী দুর্গা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১২:১৯ এএম

ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরলেন দেবী দুর্গা

ষষ্ঠী থেকে দশমীÑ টানা পাঁচ দিনের পূজা-অর্চনা ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, সঙ্গে খোল-করতাল আর ঢাকঢোলের সনাতন বাজনার সঙ্গে বন্দনার মধ্য দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে দেবী দুর্গাকে। ভক্তদের কাঁদিয়ে মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরেছেন দুর্গতিনাশিনী। এই বিদায়ে ভক্তদের মধ্যে নেমেছে বিষাদের ছায়া। 

বিসর্জন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশীর মোড় এলাকায় জড়ো হতে থাকে নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পূজা কমিটির ট্রাক, তাতে করে নিয়ে আসা হয় দেবীর প্রতিমা। শঙ্খনাদ-উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকের বাদ্য আর সধবাদের সিঁদুর খেলার আচারে দেবী দুর্গাকে অশ্রুভেজা ভালোবাসায় বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিকেল পৌনে ৪টায় শোভাযাত্রাটি পলাশীর মোড় থেকে রওনা করলে পথের দুই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো ভক্ত উলুধ্বনিতে বিদায় জানান। কেউ কেউ স্লোগান দেন ‘বলো দুর্গা কি জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’।

কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও অনেকে যোগ দেন শোভযাত্রায়। মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেছেন, সবাইকে নিয়ে আমরা দুর্গোৎসবে মেতেছিলাম। দেবীর কাছে আমরা প্রার্থনা করেছি। দেবী ফিরে যাচ্ছেন কৈলাশে, আবার ফিরবেন এক বছর পর। সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই। 

সদরঘাট এলাকায় সরেজমিনে বিকেলে দেখা যায়, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অপেক্ষা করে বিকেল থেকেই ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টার বাজনার তালে তালে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির ও মহল্লা থেকে শোভাযাত্রা করে প্রতিমাগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে আনা হয়। পরে নৌকাযোগে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় নদীর মাঝখানে, সেখানে সম্পন্ন করা হয় বিসর্জন। এ সময় ভক্তদের কারও চোখে দেখা যায় অশ্রু, কারও ঠোঁটে শোনা যায় দেবীর বন্দনা। কেউবা নদীর পানি ছিটিয়ে নিচ্ছিলেন নিজের ও পরিবারের সদস্যের শরীরে।

বিকাল ৩টায় পল্টন বদির স্কুল আয়োজিত পূজা শেষে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাট দিয়ে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগ নদ-নদীর ১০টি ঘাটে বিসর্জন হচ্ছে দুর্গাপূজার ২৫৪টি ম-পের প্রতিমা। সবচেয়ে বেশি বিসর্জন হয় বুড়িগঙ্গার বিনাস্মৃতি স্নান, ওয়াইজঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে। এ ছাড়া লালকুটি, মিল ব্যারাক, পোস্তগোলা শ্মশান, বসিলা ব্রিজ, আমিনবাজার ও আশুলিয়ার ধউরে বিআইডব্লিউটিসি ফেরিঘাটে হয়ে বিসর্জন। এর আগে বিসর্জন নির্বিঘœ করতে বিশেষ প্রস্তুতি নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার থেকে আগত শ্রাবণী চক্রবর্তী বলেন, ‘এই কয়েকটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে। মা দুর্গা আমাদের মাঝে ছিলেন, তাই আনন্দে ভরে উঠেছিল চারপাশ। কিন্তু আজ মা চলে যাচ্ছেন, সেই কষ্টে বুকটা ভরে উঠছে। আবারও এক বছরের অপেক্ষা। এবারের পূজায় আমি বিশেষ প্রার্থনা করেছি যেন আমাদের দেশ শান্তিময় হয়, সবার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নেমে আসে।’

ধানমন্ডি থানার পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মাকে বিদায় জানাতে এসেছি। মা আমাদের ধরাধামে এসেছিলেন আমাদের মঙ্গলের জন্য, অসুর বধ করার জন্য। আমরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, যাতে অশুভশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। আগামীতে দেশ যেন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং সব মানুষের মঙ্গল হয়, এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা ছিল।’  

গতকাল সকালে বিজয়া দশমীর বিহিত পূজা সম্পন্ন করে ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলি ও শান্তির জল ছিটানোর পর দর্পণ বিসর্জন হয়। দশমীর সকালে ম-প ও মন্দিরে পূজার অন্যতম প্রধান আচারে অংশ নেন নারীরা। দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করে তারা দেবীর শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর একে অপরের গায়ে সিঁদুর মেখে জীবনের সমৃদ্ধি কামনা করেন। শাস্ত্রমতে, স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর নিজের সিঁথিতে লাগিয়ে আশীর্বাদ নেন। পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গা মাকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে দেন তারা। সিঁদুর খেলা শেষে শেষবারের মতো দেবীর আরাধনা করেন।

সরেজমিন পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারে গিয়ে দেখা যায় ভক্তরা সিঁদুর কপালে ও গালে মেখে একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চারপাশে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ কেউ মনের বাসনা পূরণের জন্য দেবীর চরণে অঞ্জলি দিচ্ছেন, আবার কেউ প্রার্থনা করছেন শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য।

শাঁখারী বাজারে সিঁদুর খেলতে ও দেবীর আশীর্বাদ নিতে আসা নন্দিতা চৌধুরী বলেন, সিঁদুর খেলার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশা, দেবী যেন আমাদের সুখ-শান্তিতে রাখেন। আমরা বিশ্বাস করি, এর মধ্য দিয়ে পরিবারে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে। বিদায়ের এই ক্ষণে আমাদের প্রত্যাশা, তিনি যেন আগামী বছর আবারও আমাদের মাঝে শুভাশিস নিয়ে ফিরে আসেন।

শাঁখারী বাজারের পূজাম-পে সিঁদুর খেলায় অংশ নেওয়া পঞ্চমী রানী জানান, তিনি দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছেন, যেন স্বামীর সংসারে সবাইকে সুখে রাখতে পারেন। দেশের প্রতিটি মানুষ যেন শান্তিতে থাকে সেই প্রার্থনাও করেছেন তিনি।

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় আনন্দময়ীর নিদ্রাভঙ্গের বন্দনায় শুরু হয়েছিল এবারের উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, নবমী পূজা শেষে মর্ত্য ছেড়ে নিজালয়ে যাত্রা করেন দেবী দুর্গা। আজ দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সেই দুর্গোৎসব আয়োজন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!