রবিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০১:৪২ এএম

ছোট হাতে বড় দায়িত্ব

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০১:৪২ এএম

ছোট হাতে বড় দায়িত্ব

মো. মোজাম্মেল, বয়স তেরো  ছুঁইছুঁই। চোখে-মুখে তার যেন কষ্টের ছাপ লেগে আছে। যে বয়সে স্কুলে লেখাপড়াসহ অন্য ছেলেদের সাথে হেসে-খেলে আনন্দ-উল্লাসে বেড়ে ওঠার কথা, সে বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় জীবিকার প্রয়োজনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে এক প্রান্ত  থেকে অন্য প্রান্তে।

মোজাম্মেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মো. তনু মিয়ার ছেলে।

অটোচালক মোজাম্মেল বলেÑ আমার পরিবারে বাবা, মা আর ১ বোন রয়েছে। জায়গা-সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। অভাব-অনটনের সংসার হওয়ায় পরিবারে বাবা ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম লোক। বাবার আয়ের পথ হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় আমার ও আমার একমাত্র বোনের পড়াশোনা। একপর্যায়ে ছোট বোন মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষার জন্য ভর্তি করা হয়। জীবিকার প্রয়োজনে কিস্তিতে বাবা একটি ভ্যান গাড়ি ক্রয় করে নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করেন। কিছুদিন যাওয়ার পর এক স্বজনকে নিজের জিম্মায় কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনে দেন। বাবা কষ্ট করে ভ্যান গাড়ির কিস্তি দিয়ে আসছে। কিন্তু ওই স্বজন কয়েকটি কিস্তি দেওয়ার পর টালবাহানা শুরু করে। এরপর ভ্যান ও অটোরিকশার কিস্তি দিতে বাবার অনেক চাপে পড়ে যায়। 

মোজাম্মেল বলে আজ থেকে কয়েক বছর আগে ভালো আয়ের আশায় আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাই। সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করি। বাবা সেখানে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাত। বাবার সাথে থেকে আমিও ভ্যান চালানো শিখি। এরপর নিজেও ভ্যান গাড়ি চালানো শুরু করি। প্রায় বছর দুয়েক সেখানে ভ্যান চালানো হয়। সেখানে বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চলতে অনেকটাই কষ্ট হতো। একপর্যায় পুনরায় গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসা হয়। বাড়িতে এসে বাবা পুরোনো ভ্যান গাড়িটি বিক্রি করে দেয়। কারণ, এটি পুরোনো ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চালাতে কষ্ট হতো। বাবার ভ্যান না থাকায় আমি গত ১০ দিন ধরে ভাড়ায় অটোরিকশা চালাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে চালিয়ে ৩৫০ টাকা মালিককে ভাড়া দিয়ে  ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। এরপর আয়ের টাকা বাবার হাতে তুলে দিই। সেখান থেকে বাবা আমাকে ৩০-৪০ টাকা খরচের জন্য দেয়।

মোজাম্মেল বলে, সংসার চালানোর পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা দিতে গিয়ে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়। তাই আমি অটোরিকশা চালিয়ে সামান্য আয় করে বাবাকে সহযোগিতা করছি। বাবা এখন চিন্তা করছেন নতুন ভ্যান কেনার। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে ভ্যান গাড়ি ক্রয় করবেন।

মোজাম্মেল আরও জানায়, ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা করার আমার খুবই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে  রিকশা চালাতে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারিনি ।

মোজাম্মেল বলে, বয়সে ছোট হওয়ায় লোকজন আমার রিকশায় উঠতে চান না। তখন খুবই খারাপ লাগে। অনেক মানুষ আমাকে চিনেছেন, রাস্তায় আমাকে দেখলে এখন তারা অটোরিকশায় উঠছেন। সে আরও জানায়, আমার বয়সের ছেলেরা যখন স্কুলে যায়, সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করে তখন খুবই খারাপ লাগে। আমার ইচ্ছা করে তাদের সাথে খেলতে। হইহুল্লোড় করতে। বন্ধু-বান্ধবদের সাথে খেলাধুলা করে সময় কাটাতে। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে হয়েছে।

অটোযাত্রী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথমে তার রিকশায় উঠে ভয় পেয়েছিলাম। পরে দেখি সে ভালোই রিকশা চালায়। তাকে নিয়ে আখাউড়া থেকে গাজীর বাজার এলাকায় গিয়েছি এবং সেখান থেকে পুনরায় আখাউড়ায় আসা হয়। কোনো রকম সমস্যা হয়নি।

সে ছোট হলেও চালানোর ভালো দক্ষতা রয়েছে। অটোচালক মোজাম্মেল বলেন, আমি বিশ্বাস করি রিকশার চাকা ঘুরলে আয় বাড়বে। তাই আমি এক মুহূর্তের জন্য রিকশা নিয়ে বসে থাকি না।  যে যেখানে বলে সেখানেই চলে যাই। ভাড়া নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। যাত্রীরা যা দেয় তা নিয়েই চলে আসি।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!