দানব হওয়া ঠেকাতেই  উচ্চকক্ষের প্রস্তাব

উচ্চকক্ষ থাকলে শেখ হাসিনা দানব হয়ে উঠতে পারত না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ থাকলে তার পক্ষে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী সম্ভব হতো না। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দানব হয়ে উঠেছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পৃষ্ঠপোষকতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সংলাপের আয়োজন করেছে। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘শেখ হাসিনার কথা যদি ধরি, তিনি কিন্তু ট্যাংকে করে আসেন নাই, উর্দি পরেও আসেন নাই। এসে (ক্ষমতায়) সংবিধানও বাতিল করে দেননি। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছিলেন, যদিও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা কীভাবে স্বৈরাচার, দানবে পরিণত হয়েছিলেন? কারণ, স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই তাকে দানবে পরিণত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, এই ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা। অবসান না ঘটলেও কিছু চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের বিষয় আসবে।’

তিনি আরও বলেন, উচ্চকক্ষের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে একমত না হলেও বাস্তবতার নিরিখে তিনি একমত হয়েছেন এবং চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে একটি সুপারিশ করা হয়েছে। জবাবদিহি না থাকার কারণেই শেখ হসিনা দানবে পরিণত হয়েছিলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য আরও বলেন, ‘উচ্চকক্ষ থাকলে শেখ হাসিনার পক্ষে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী সম্ভব হতো না। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দানব হয়ে উঠেছিলেন। সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে কোনো একক দল যাতে আর একক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, সে জন্য উচ্চকক্ষ করা। ফলে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলে ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।’

ড. বদিউল আলম বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অসামঞ্জস্যতার কারণে শেখ হাসিনা দানব হয়েছিলেন। এটি আমরা ২০০১ ও ২০০৮ সালে দেখেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট। সেবার বিএনপি ১৯৩টি আসন পায়, আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি আসন। ২০০৮ সালে নৌকায় ভোট পড়ে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, আসন পায় ২৩০টি। ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, তারা মাত্র ৩০টি আসন পায়। এই যে অসামঞ্জস্যতাÑ এটি বড় দুর্বলতা। বিএনপিও তখন (২০০১-২০০৬) অনেক কিছু করেছিল বলে এক-এগারো আসে। এসব ঠেকাতেই উচ্চক্ষের প্রস্তাব, যা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স তৈরি করবে।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম আহমেদ।  

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বেশ কিছু সংস্কার ধারণা যেমনÑ বাইক্যামেরালিজম, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি বা নিয়োগ কমিটি গঠন নীতিগতভাবে আকর্ষণীয় হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এসব কার্যকর নয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এসব প্রস্তাব কার্যত প্রতীকী হয়ে থাকবে। এতে জবাবদিহি বা ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বদলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা, প্রভাব বিস্তার ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই উচ্চকক্ষ গঠন না করে বিদ্যমান সংসদকেই কার্যকর করার ওপর জোর দিতে হবে।