শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

শান্তির ঘুমে গাজাবাসী, বিশ্ববাসীর মনে স্বস্তি

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৫, ০১:৫২ এএম

শান্তির ঘুমে গাজাবাসী, বিশ্ববাসীর মনে স্বস্তি

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবরে স্বস্তি নেমেছে গাজাবাসীর মনে। ইসরায়েলি বাহিনীর টানা বিমান হামলা ও সেনা অভিযান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে রেহাই পেয়ে ‘শান্তির ঘুম’ নেমেছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের চোখে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দে আতঙ্কে জেগে ওঠা শিশুরাও প্রথমবারের মতো অশ্রুহীন রাত কাটিয়েছে। তাদের ক্লান্ত শরীর যেন প্রথমবারের মতো নির্ভয় রাত পেয়ে একটু জিরিয়ে নিল। গাজা থেকে আলজাজিরাকে এমনই এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক হানি মাহমুদ।

বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়শিবিরের পাশেই আলজাজিরার সম্প্রচারকেন্দ্র। যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর থেকেই একের পর এক সাংবাদিক সেখানে ছুটে গিয়েছেন সংবাদ প্রচারের লক্ষ্যে। তাদের সবাই অবাক চোখে দেখেছেন, শিবিরের প্রতিটি তাঁবুতে পিনপতন নীরবতা। সবাই ঘুমে কাতর। হানি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, তারা (ফিলিস্তিনিরা) এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। বহু মাস পরে আজ রাতটা শান্ত। তারা একটু বিশ্রাম নিতে চাইছেন, কখন আবার ছুটে পালাতে হয়!’ তিনি বলেন, ‘এর আগের যুদ্ধবিরতিগুলোতে আমরা গাজায় আনন্দ দেখেছি, প্রিয় মানুষের ঘরে ফেরার অপেক্ষা দেখেছি, দেখেছি উল্লাস এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাকে ফের গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।’

‘তবে এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজার এক ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। উল্লাসের বদলে আমরা দেখেছি স্বস্তি। ঘুমন্ত শিশুকে নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে হবে নাÑসেই স্বস্তি। ছুটতে ছুটতে পেছন ফিরে কাছের মানুষের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখতে হবে নাÑ সেই স্বস্তি। শিশুর মুখে এক বেলা খাবার জোগাতে শত শত কিলোমিটার আতঙ্কে চলতে হবে নাÑ সেই স্বস্তি।’ হানি মাহমুদ বলেন, ‘আমরা গাড়ি করে পুরো রাত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শিবিরে শিবিরে ঘুরেছি। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এসব তাঁবুতে গিজগিজ করছে। কিন্তু আমরা তাঁবুর বাইরে তেমন কাউকে দেখিনি। এমনকি রাস্তায়ও কোনো মানুষ দেখিনি। সবাই নিজ নিজ তাঁবুতে ঘুমে আচ্ছন্ন।’

“গত কয়েক সপ্তাহে, গাজার মানুষ ঘুমের ‘বিলাসিতা’ পায়নি” উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা সব সময় অতিমাত্রায় সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। যেভাবে নির্বিচারে ড্রোন হামলা, বিমান হামলা এবং গাজা উপত্যকাজুড়ে অবিরাম গোলাবর্ষণ চলছিল- গাজাবাসী নিজেদের প্রাণ হাতে ছুটে পালানোর জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিলেন। তারা প্রতি রাতে, প্রতিটি মুহূর্তে সজাগ ছিলেন।’ ‘কিন্তু আজ রাতে, অস্বাভাবিকভাবে, যখন আমরা গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর পেলাম, তখন আর প্রত্যাশিত আনন্দ কারো চোখে দেখতে পেলাম না।

সবাই ক্লান্ত, সবাই ক্ষুধার্ত’, বলেন হানি। এই ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের মতে, এই ঘুমন্ত গাজাবাসীর জন্য নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারার সৌভাগ্য খুবই দামি। এটি সম্পদের চেয়ে কম নয়। তবুও প্রশ্ন রাখেন এই সাংবাদিক। জানতে চান, ‘এতেই কি সব কিছু বদলে যায়? একটি যুদ্ধবিরতি কি গাজায় শান্তি আনতে পারে? যেখানে পথে-ঘাটে মরদেহের সারি, রক্তের দাগ, সন্তানদের কবরÑ সেখানে একটি নীরব রাত কি আসলেই শান্তি এনেছে?’

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফিলিস্তিনের গাজা ও ইসরায়েলে জিম্মিদের পরিবারগুলোর মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। গাজায় এখনো কোথাও কোথাও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকলেও যুদ্ধবিরতির খবরেই মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়। বৃহস্পতিবার গাজার তরুণ-তরুণীরা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া রাস্তায় নেচে, স্লোগান দিয়ে উদযাপন করেছে এই মাহেন্দ্রক্ষণ ।

টানা দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার শহর খান ইউনিসের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ আব্দ রাব্বো রয়টার্সকে বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাত বন্ধের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু আমি না, পুরো গাজা খুশি। আরব বিশ্বসহ যারা আমাদের পাশে ছিলেন, সবাইকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা জানাই।’

ইসরায়েলের তেল আবিবে ‘জিম্মি চত্বর’-এও ছিল আনন্দের উৎসব। গাজায় হামাসের হাতে বন্দি এক জিম্মির মা আইনভ জাঙ্গাউকার বলেন, ‘আমি দম নিতে পারছি না, কী অনুভব করছি তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এটা অপরিসীম আনন্দ।’ নিজের ছেলের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ওকে দেখলে আমি শুধু জড়িয়ে ধরব, চুমু খাব, আর বলবÑ আমি তোমাকে ভালোবাসি।

তার চোখে আমার চোখ ডুবে যাবেÑ এটাই আমার স্বস্তি।’ খান ইউনিসের বাসিন্দা ওয়েল রাদওয়ান এই চুক্তির কৃতিত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তিনি বলেন, ‘যারা যুদ্ধ থামাতে এবং রক্তপাত বন্ধ করতে অবদান রেখেছেনÑ যদিও তা শুধু মুখের কথাও হয়ে থাকেÑ তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। তাদের মধ্যে হওয়া চুক্তি উদযাপন করতে খান ইউনিসের রাস্তায় আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে। রয়টার্সের হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মানুষের ছোট একটি দল গান গাইছে, নাচছে ও উল্লাস করছে। শিশুদেরও হাততালি দিতে দেখা গেছে। একপর্যায়ে একটি স্পিকার থেকে জোরে গান বাজতে শুরু করে তারা।

গাজায় তখনো ভোররাত, আর অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইন্টারনেট সংযোগ খুবই দুর্বল। তাই অনেকেই হয়তো হামাস ও ইসরায়েলের চুক্তির খবর এখনো জানেন না বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন গাজার সাংবাদিকরা। তারা আরও বলেন, গাজা সিটিতে এখনো বোমাবর্ষণ চলছেÑ বিশেষ করে সেই এলাকায়, যেখানে গত মাসে ইসরায়েল স্থল অভিযান চালিয়েছিল। এ কারণেই অধিকাংশ মানুষ আপাতত বাড়িতেই অবস্থান করছেন।

গাজা সিটির বাসিন্দা মোহাম্মদ আল-জারু সিএনএনকে জানান, বুধবার তিনি বেশ নিচ দিয়ে যুদ্ধবিমান উড়ে যেতে দেখেছেন এবং মঙ্গলবার সারা দিন ও রাতজুড়ে সেখানে বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ হয়েছে। তাই গাজাবাসী চুক্তি উদযাপন করলেও তারা সতর্ক রয়েছেন। আর সতর্ক থেকেই আশা প্রকাশ করছেন যে, চুক্তিটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার অবসান ঘটাবে। খান ইউনিসের বাসিন্দা খালেদ শাআত বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এগুলো এমন মুহূর্ত, যা ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত হবে।

দুই বছরের হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার পর ফিলিস্তিনিদের জন্য এটাই ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মুহূর্ত।’ খান ইউনিসের আরেক বাসিন্দা ওয়েল রাদওয়ান এই চুক্তির কৃতিত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!