খুলনায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে মো. সবুজ খান (৫০) নামে এক ব্যবসায়ীকে। সংবাদ সম্মেলন করে সুদখোর ও মামলাবাজের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা চাওয়ার চার দিনের মাথায় খুন হলেন সবুজ খান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহানগরের খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকায় এ হত্যাকা- ঘটে। নিহত সবুজ খানের শ্যালিকা নাজমাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। এ নিয়ে অক্টোবর মাসের ৯ দিনে খুলনায় ৪টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সুদে কারবারি, মাদক ব্যবসায়ী ও মামলাবাজ নাজমার নেতৃত্বে তার স্বামী, ছেলে ও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সবুজ খানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত সবুজ খান মহানগরের খালিশপুর থানার ১০নং ওয়ার্ড লাল হাসপাতাল এলাকার বাসিন্দা।
নিহতের স্ত্রী শাহিনুর বেগম বলেন, আমার বোন নাজমা ও তার ছেলেরা আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। কয়েকদিন আগে তারা এক নিরীহ মানুষকে মারছিল, তখন আমার স্বামী বাধা দিয়েছিল, এই রাগ থেকেই তাকে খুন করা হয়েছে।
নিহতের বড় মেয়ে সাথী বেগমের অভিযোগ, খালিশপুরের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী নাজমা, কালাম, সোহেল, সুজন, সাগর, জয়, বিজয়, আরিফ ও ইয়াদ আলী মিলে পরিকল্পিতভাবে আমার বাবাকে হত্যা করেছে। এলাকার মাদক ও সুদের ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
১১নং ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদ হোসেন বলেন, সবুজ খানের হত্যাকারীরা খালিশপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী। একাধিক হত্যা মামলার আসামি মাদক স¤্রাট মনিরুল ওরফে নজরুল মন্ডলের নেতৃত্বে এই হত্যাকা- ঘটেছে। মাদক ব্যবসা নিয়ে প্রতিবাদ করায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে আছি। এরা এতটাই ক্ষমতাশালী যে, থানায় মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করতে হয়েছে। মামলা হওয়া সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে প্রশাসন নীরব রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খালিশপুর বক্কর কলোনি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি মাদক ও সুদ সিন্ডিকেট সক্রিয়। সবুজ খান তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এলাকাটি দখলে রাখতে সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালিশপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে পারিবারিক বিরোধ এবং পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যাকা- ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাজমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, হত্যার মাত্র চার দিন আগে, গত ৫ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে সবুজ খানের জামাতা মো. বাবু সংবাদ সম্মেলন করে নাজমাকে সুদখোর ও মামলাবাজ হিসেবে অভিযুক্ত করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সবুজ খান ও তার স্ত্রী শাহিনুরসহ পরিবারের অন্য সদস্য ও ভুক্তোভোগীরা। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করছে, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবেই বৃহস্পতিবারের হত্যাকা- ঘটতে পারে। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খুলনায় সর্বশেষ গত ৬ অক্টোবর ইমরান মুন্সি নামে এক যুবককে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা নগরীর বসুপাড়া বাঁশতলায় নেশার জন্য টাকা না পেয়ে লিটন খান নামের এক ব্যক্তিকে শ্বাসরোধ ও গলাকেটে হত্যা করে তার ছেলে।
অন্যদিকে গত ১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া বাজার এলাকায় নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন