*** দুই মেয়াদে নির্মাণ কাজের সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কাজ
*** সংযোগ সড়ক নির্মাণে বড় বাধা জমি অধিগ্রহণ
*** সাড়ে চার বছরে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন
*** এ সেতু খুলে দিবে তিন জেলার মানুষের উন্নয়ন ও বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত
গড়াই নদীর তীরে, রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের পাশে এবং নদীর অপর তীরে মাগুরার শ্রীপুরের গয়েশপুর ও ঝিনাইদহের শৈলকুপার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের সংযোগ স্থলে নির্মাণ হচ্ছে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ গড়াই সেতু। এই সেতুটি খুলে দেবে তিন জেলার মানুষের জন্য উন্নয়ন ও বাণিজ্যের নতুন দিগন্ত। তবে দুই মেয়াদে নির্মাণ কাজের সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি সেতুর কাজ। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্থানীরা।
২০২০ সালের ৩ জুন পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (সিআইবিআরআর) আওতায় প্রায় ৬৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজটি পায় মীর হাবিবুল আলম ও এমএম বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথম ধাপে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত। তবে কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি অধিগ্রহণের জট। রাজবাড়ী অংশে ৩.৬৬৫ একর, ঝিনাইদহ অংশে ২.৫২ একর এবং মাগুরা অংশে ০.১৮ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে কাজটি শেষ হয়নি।
সম্প্রতি সেতু এলাকার কসবামাজাইল ইউনিয়নের নাদুরিয়ায় গিয়ে দেখা গেছে, নাদুরিয়া বাজারের পূর্বে একটি কাঁচা পথ গিয়ে শেষ হয়েছে সেতুর পাড়ে। সেখানে স্থানীয় কৃষক রমজান আলীর বাড়ির ওপর দিয়েই শুরু হয়েছে সেতুর একপ্রান্ত। সেতুর মাথা থেকে প্রায় এক হাজার মিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ সড়ক হওয়ার কথা, যা যুক্ত হবে পাংশা-লাঙ্গলবাদ সড়কের সঙ্গে। কিন্তু এখনো সড়কের কাজ শুরু হয়নি।
স্থানীয় কৃষক মন্টু বিশ্বাস বলেন, যেখানে সেতু হচ্ছে, তার বেশির ভাগ জমি আমার। কিন্তু এখনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। লিজের কিছু টাকা পেলেও মূল দাম কত নির্ধারণ হয়েছে তা জানি না। জমির টাকা না পেলে আমরা সড়কের কাজ করতে দেব না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী বিজন কৃষ্ণ বাড়ৈ জানান, সারা বছর কাজ করা যায় না, বর্ষায় ছয় মাস কাজ বন্ধ রাখতে হয়। গত সাড়ে চার বছরে আড়াই বছরই কাজ বন্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মেয়াদেও কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমরা তৃতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বাকি কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। সেক্ষেত্রে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে পুরো সেতুর কাজ শেষ হতে পারে। তিনি আরও জানান, ৫২টি গার্ডারের মধ্যে ৩৬টি বসানো হয়েছে, স্প্যান ও পাইলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজবাড়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের কারণেই নির্মাণে দেরি হচ্ছে। একবার অধিগ্রহণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজটি থেমে যায়। এখন দ্বিতীয় দফায় জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। মাগুরা ও ঝিনাইদহ অংশে কাজ এগোচ্ছে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা গড়াই সেতুটি দ্রুত শেষ হলে তিন জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বদলে যাবে উন্নয়নের চিত্র। বাণিজ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহনেও আসবে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন