শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

জুলাই সনদ নিয়ে মতবিরোধ দূর হোক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

জুলাই সনদ নিয়ে মতবিরোধ দূর হোক

জাতীয় ঐকমত্যের প্রতীক হিসেবে বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদ অবশেষে স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে আজ। দীর্ঘ আলোচনার পর, নানা রাজনৈতিক টানাপোড়েন ও নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এ ঐতিহাসিক দলিলটি স্বাক্ষরের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সনদে সই করতে রাজি হওয়ায় দেশজুড়ে এক ধরনের আশাবাদ জেগেছে। তবে আশার পাশাপাশি কিছু অনিশ্চয়তা, মতভিন্নতার বিষয়টি এখনো উদ্বেগের জায়গা তৈরি করছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন এক সময় এই সনদ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হলো, যখন জাতি চায় স্থিতিশীলতা, চায় পারস্পরিক আস্থা ও গণতন্ত্রের এক নতুন সূচনা।

তবে আশার পাশাপাশি এখনো কিছু প্রশ্ন ও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সনদ স্বাক্ষরের আগমুহূর্তেও বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ করে সই করার কথা জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও পুরোপুরি নিশ্চয়তা মেলেনি। এনসিপি বলছে, সনদের বাস্তবায়নপথ পরিষ্কার না হলে তারা সইয়ে যাবে না। ইসলামী আন্দোলন গণভোটের সময়সীমা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। অপরদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোট সনদে সই না করার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে ঐক্যের এ উদ্যোগে এখনো কিছু ভিন্নমত ও দ্বিধা রয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মতবিরোধ দূর না হলে সনদের প্রকৃত তাৎপর্য ক্ষীণ হয়ে পড়বে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস স্পষ্ট করে বলেছেন, জুলাই সনদ ও নির্বাচন পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হবে জাতীয় নির্বাচন, এবং এই সনদ সেই নির্বাচনের প্রস্তুতিরই অংশ। অর্থাৎ জুলাই সনদ শুধু একটি দলিল নয়; এটি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের রূপরেখা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়কে তিনি এই সনদের মাধ্যমে একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রশ্ন হলো, এই সনদ সত্যিকার অর্থে কতটা ঐকমত্যের দলিল হতে পারছে? যদি প্রতিটি দল নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে, আপত্তির নোট সংযুক্ত করে বা বাস্তবায়নের পথে অনিশ্চয়তা রেখে সই করে, তাহলে তা কি জনগণের প্রত্যাশিত ঐক্য ও আস্থার প্রতীক হতে পারে? ঐকমত্য মানে মতভিন্নতার অনুপস্থিতি নয়, বরং মতের ভিন্নতাকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে যৌথ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া যেন আস্থাহীনতা ও সন্দেহে আটকে না যায়, সেটিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজনীতিতে ঐকমত্যের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি বলেই বাংলাদেশ বারবার রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। দলীয় বিভাজন, অবিশ্বাস, প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাবÑ সব মিলিয়ে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদ একটি আশার আলোকস্তম্ভ। এটি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে, ফিরে আসবে জনগণের আস্থা, স্বচ্ছতা আসবে প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থায়। আর সেটিই হবে গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটানোর প্রকৃত পথ।

সনদে স্বাক্ষর কেবল একটি প্রতীকী কাজ; এর আসল মূল্য নিহিত রয়েছে কার্যকর বাস্তবায়নে। কেবল মুখে মুখে ঐকমত্য ঘোষণা করলেই চলবে নাÑ তার প্রয়োগ দেখতে হবে মাঠে, প্রশাসনে এবং আসন্ন নির্বাচনে। জনগণ জানতে চায়, এই সনদে সই করে দলগুলো কী বাস্তব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কীভাবে তা রক্ষা করা হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণ কতটা নিশ্চিত করা হবে।

জাতি আজ এক মোড় ঘোরার মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। জুলাই সনদ সেই মোড় ঘোরার সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। এখন ভেদভেদ নয়, প্রয়োজন ঐক্য। সন্দেহ নয়, বিশ্বাস। প্রতিযোগিতা নয়, সহমর্মিতা। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি যেন এই সনদের আলোয় আলোকিত হয় এবং এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে একটি ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক সমাজ। কোনো দল বা মত যেন জাতির বৃহত্তর ঐক্যের পথে অন্তরায় না হয়।

আমাদের প্রত্যাশা, জাতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সব মতবিরোধ দূর করে জুলাই সনদ ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে। কেননা সত্যিকারের ঐক্য ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি স্থাপন করতে পারলে, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সত্যিই হয়ে উঠবে জাতীয় পুনর্জাগরণের এক নতুন অধ্যায়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!