তহবিল ঘাটতি ও আর্থিক সংকটের কারণে গাজা, সুদান, ইয়েমেনসহ প্রায় ছয়টি দেশে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে কয়েক কোটি মানুষ মারাত্মক খাদ্যসংকটে পড়বে এবং ২০২৬ সাল নাগাদ এসব অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। বুধবার ‘এ লাইফলাইন অ্যাট রিস্ক’ শিরোনামে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভূতপূর্ব অর্থসংকটের কারণে ছয়টি দেশেÑ গাজা, সুদান, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও আফগানিস্তানেÑ রেশন কমানো, খাদ্য বিতরণ স্থগিত করা এবং কিছু জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে সংস্থাটি। ডব্লিউএফপি-এর জরুরি প্রতিক্রিয়া বিভাগের পরিচালক রস স্মিথ বলেন, ‘এই ছয়টি দেশে আমরা দেখছি মানুষ পুরোপুরি ত্রাণ সহায়তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আমরা এক ভয়াবহ সংকটের দ্বারপ্রান্তে।’ সংস্থার খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বিশ্লেষণ বিভাগের পরিচালক জ্যা-মার্টিন বাওয়ার জানান, সরাসরি তহবিল সংকটের ফলে এ বছরই ১ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ জরুরি পর্যায়ের দুর্ভিক্ষে পতিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ‘যখন প্রয়োজন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, তখনই বিশ্ব যেন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। মানবিক সহায়তাব্যবস্থার ভিত্তি ভেঙে পড়ছে, এতে ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটি কেবল সংখ্যা নয়Ñএগুলো বাস্তব মানুষ, মা ও শিশুরা, যাদের খাদ্য ও চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
ইতিহাসে প্রথমবার আমরা একসঙ্গে গাজা ও সুদানে দুটি দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।’ সংস্থার তথ্য মতে, গাজা, সুদান, দক্ষিণ সুদান, মালি ও ইয়েমেনে অন্তত ১৪ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ ছাড়া গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও খাদ্য প্রবেশে বাধা ও তহবিল সংকটের কারণে অচিরেই বিপুলসংখ্যক মানুষ খাদ্যবঞ্চিত হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যদিকে সুদানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করেছে সংস্থাটি। আগস্টে তারা ৪১ লাখ মানুষকে সহায়তা দিলেও, তহবিল সংকটে প্রায় দ্বিগুণ মানুষকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আফগানিস্তানে ১ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, আর শীতকালীন সহায়তা আরও সীমিত হয়ে ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়ায় বন্যা ও তহবিল ঘাটতির কারণে খাদ্য কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সীমিত করা হয়েছে। সোমালিয়ায় এক বছরের ব্যবধানে জরুরি সহায়তা ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তাদের সহায়তা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে এবং জরুরি তহবিল না পেলে ২০২৬ সালে আরও কাটছাঁট হতে পারে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৩১ কোটি ৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ৪৪ কোটি মানুষ জরুরি ক্ষুধার পর্যায়ে রয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন