চড়া শুল্ক। আর এ কারণে গত চার মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রপ্তানি ৩৭.৫ শতাংশ কমেছে। শুধু গত সেপ্টেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য রপ্তানি ২০ শতাংশ কমে গেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর ভারতীয় রপ্তানিতে ভয়াবহ এই ধস নেমেছে বলে দেশটির সরকারি এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। এদিকে রাশিয়া থেকে ভারত আর তেল কিনবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ট্রাম্পের এমন দাবির পর নয়াদিল্লি জানিয়েছে, ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, ট্রাম্পের ইশারায় নাচছেন মোদি। এদিকে, মস্কোর তেল বাণিজ্য বন্ধে ভারত ও চীনের বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর ট্রাম্পের সামনে এবার লক্ষ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া। কয়েক দফা দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর তাই অনেকটাই নাখোশ ট্রাম্প। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে মস্কোকে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনায় ভারতকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছেন ট্রাম্প। এরই জেরে ভারতের ওপর দায় চাপিয়ে আরোপ করেছেন উচ্চহারে বাণিজ্য শুল্ক। বুধবার হোয়াইট হাউসের এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধে আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। চীনকেও একই পথে আনার চেষ্টা করছেন তিনি। তবে যুদ্ধ শেষ হলে রাশিয়ার তেল কেনায় কোনো বাধা থাকবে না বলেও জানান ট্রাম্প। এরই মধ্যে আলাদাভাবে তার এ মন্তব্যের জবাব দিয়েছে ভারত ও রাশিয়া। ভারত বলেছে, তাদের জনগণের স্বার্থ সর্বাগ্রে থাকবে। আর রাশিয়া বলেছে, ভারতের অর্থনীতির জন্য রাশিয়ার তেল গুরুত্বপূর্ণ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। ট্রাম্পের মন্তব্য এবং ভারত সরকারের সতর্ক প্রতিক্রিয়ার পর বলা হয়েছে, ‘অস্থির জ্বালানি পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের ধারাবাহিক অগ্রাধিকার।
আমরা ভারতের নীতির ভিত্তিতে এগোই।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, প্রথমত, এটি ভারতের জনগণ এবং জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থ প্রতিফলিত করে এবং এই লক্ষ্যগুলো রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের সঙ্গে বিরোধ করবে না। আমরা এই খাত (তেল ও গ্যাস) নিয়ে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় অব্যাহত থাকব। বিবৃতিতে এটিও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ভারত-আমেরিকা সম্পর্কের মধ্যে হস্তক্ষেপ করবে না রাশিয়া। তবে দিল্লিকে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সম্মান করি। ভারত রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখে। ট্রাম্পের এমন দাবির পর নয়াদিল্লি বলছে, ভারতীয়দের স্বার্থ রক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের আমদানিনীতি পুরোপুরি গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এ ছাড়া, জ্বালানির দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য বলেও জানানো হয়। তবে মোদির কড়া সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের ইশিরায় নাচেন। এক্স বার্তায় তিনি লেখেন, ট্রাম্পকে রীতিমতো ভয় পান মোদি। এ ছাড়াও, কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ মন্তব্য করেন, ভারতের কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এদিকে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রুশ অর্থনীতিকে দুর্বল করার পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন