শাপলা ছাড়া বিকল্প প্রতীক পছন্দের শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনে এসে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বলেছেন, কোনো ধরনের ‘চাপিয়ে’ দেওয়া প্রতীক তারা নেবেন না। ইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন গতকাল রোববার সকালে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপি নেতারা। শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনড় অবস্থানের কথা তুলে ধরে ইসির চিঠির জবাবও তারা দিয়েছেন। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা দেখেছি যে নির্বাচন কমিশন একটি স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে এই সিদ্ধান্তগুলো আসলে চাপিয়ে দেওয়া।
এদিকে একই দিন সিলেটে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম ফের জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সাংবিধানিক আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচনি প্রতীকের তালিকায় শাপলা নেই। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতের মতো কোনো সুযোগ নেই। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি আগামী নির্বাচনি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে তফসিলে থাকা ৫০টি প্রতীক থেকে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে মার্কা বেছে নিতে চিঠি দেয় ইসি। নির্ধারিত সময়ে এনসিপি পছন্দের প্রতীক বাছাই না করে বিধি সংশোধন করে ফের শাপলা বরাদ্দের দাবি জানায়। কিন্তু ইসি কাউকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ইসি বলছে, এনসিপি শাপলা দাবি করলেও প্রতীক তালিকায় না থাকায় তা বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ইসির সিদ্ধান্তও বদলায়নি।
এদিকে বর্তমান ইসির প্রতীক বরাদ্দের কোনো নীতিমালা নেই মন্তব্য করে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ গতকাল বলেন, ইসিতে প্রাতিষ্ঠানিক অটোক্রেসি তৈরি হয়েছে, ইসির মনোভাব দেখে মনে এটা হচ্ছে। বিদ্যমান দলগুলোকে যে মার্কা দেওয়া হয়েছে, কোনো নীতিমালা নেই। মধ্যযুগীয় বর্বর শাসনব্যবস্থাÑ যেমন দেখতাম রাজা যেমন ইচ্ছা করছে। রাজা বাদশাহদের আচরণের সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। আসলে রিমোট কন্ট্রোলটা অন্য জায়গায়। নির্বাচন কমিশন স্পাইনলেস (মেরুদ-হীন)। বর্তমান ইসির সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ‘যোগ্যতা নেই’ বলেও মন্তব্য করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এনসিপির মুখ সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দলের পক্ষ থেকে চিঠির জবাবে চারটি বিষয় তুলে ধরেছেন তারা। এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না, সেই সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেড় কোটি মৃত ও প্রবাসী ভোটার রয়েছে তালিকায়। এটা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। দলীয় কর্মকর্তা ও দুর্নীতিগ্রস্তদের সরাতে হবে। যেখানে চারজন ইসি দলের ও আর্মির, আর বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকা-ে জাতীয় নিরাপত্তাঝুঁকি নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। চারটি বিষয় সমাধান করতে হবে। সমাধান করতে না পারলে ইসির পদত্যাগ করতে হবে। এনসিপি শাপলা পাবে বলে তারা আশাবাদী, মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের জন্য ৫০টি প্রতীক রয়েছে। বেগুন, খাটসহ প্রতীক রয়েছে। আমরা স্পষ্ট প্রশ্ন করেছি, কোন নীতিমালার ভিত্তিতে এ তালিকা করা হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ইসি আইনগতভাবে যেকোনো প্রতীক বরাদ্দ দিতে পারে না। এটা আমরা ইসিকে জানিয়েছি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। দল দুটির প্রতীকসহ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। নির্ধারিত তালিকা থেকে প্রতীক পছন্দ করতে গত সপ্তাহে এনসিপিকে চিঠি পাঠানোর পর ইসি সচিব আখতার আহমেদ গত মঙ্গলবার বলেছিলেন, এনসিপি আগামী রোববারের (গতকাল) মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা বিধির তফসিলে থাকা তালিকা থেকে প্রতীক বাছাই করে জানাতে ব্যর্থ হলে ইসি ‘নিজস্ব পদ্ধতিতে’ এনসিপিকে মার্কা বরাদ্দ দেবে।
ইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন গতকাল নির্বাচন কমিশনে যান এনসিপির নেতারা। নির্বাচন ভবনে ইসি সচিবের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের বৈঠক চলে। বৈঠক শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শাপলা ছাড়া বিকল্প কোনো অপশন নাই। আমরা বিকল্প কেন নেব? এটার আইনগত তো ব্যাখ্যা লাগবে। আমরা দেখেছি, এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যাখ্যা, কোনো কিছুই নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে দিতে পারেনি। এ মার্কার জন্য আমরা আমাদের জায়গায় দৃঢ় রয়েছি এবং আমাদের রাজনৈতিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে এই শাপলা অবশ্যই আমরা অর্জন করব। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন