টানা আন্দোলনের পর দাবি আদায় হওয়ায় ক্লাসে ফিরেছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এবার জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নসহ ৫ দাবিতে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে আড়াই ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। পাশাপাশি দাবির বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারা ও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে আজ বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষকরা। এদিকে শিক্ষকদের আড়াই ঘণ্টা অবরোধ শেষে পল্টন থেকে প্রেসক্লাবগামী যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গতকাল অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারকলিপি দিতে যান। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে না পারায় সংগঠনের নেতারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ‘অসম্মানজনক আচরণের’ অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগও দাবি করেন শিক্ষকরা।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি ছিল শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও দাবি নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু পদযাত্রা শুরু করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হয়।’ তিনি জানান, পুলিশের সহযোগিতায় ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করলেও শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের সঙ্গে দেখা না করে অপমানজনক আচরণ করেছেন।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটি শুধু শিক্ষকদের নয়, গোটা শিক্ষক সমাজের প্রতি অবমাননা গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষক সমাজকে অসম্মান করেছেন। তাই আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।’ এ ঘটনার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি হিসেবে আজ বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ সেখানে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পদযাত্রা আটকে দেয়। এর কিছু দূরে শিক্ষা ভবন মোড় থেকে সচিবালয়গামী পথেও পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। পুলিশের বাধায় শিক্ষকেরা সড়কে বসে অবস্থান নিলে পল্টন-প্রেসক্লাব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে পুলিশের সহযোগিতায় ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করে। প্রতিনিধিদলে সংগঠনের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান ও সদস্য সচিব মাওলানা মো. আল-আমিনসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রেসক্লাব, পল্টন ও শাহবাগ এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। যানবাহনের ধীরগতি ও দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও লোকাল বাসের যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা যায়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের আন্দোলনে পল্টন-প্রেসক্লাব সড়কে অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী অংশ নিয়েছেন।
আন্দোলনে আসা শিক্ষক সুলেমান ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হয়নি। বাংলাদেশের এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নেই যে, আমাদের নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। আড়াই মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আমাদের ফাইল পড়ে আছে। কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এর আগে গত জানুয়ারিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকেরা রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৮ জানুয়ারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়। তবে ওই ঘোষণার পর এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হয়নি। এ কারণে জাতীয়করণ ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিতে আবার সড়কে নেমেছেন ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।
শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো : ১. চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারির জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, ২. এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেরিত ১ হাজার ৮৯টি প্রতিষ্ঠানের ফাইল দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে, ৩. অনুদানবিহীন স্বীকৃত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর এমপিও আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে, ৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং ৫. ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর স্থাপন করতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন