সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পেতে নানা হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতার মুখে পড়েন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারা কিছুই পান না। এ জটিলতা দূর করার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যাতে চাওয়ার আগেই ক্ষতিপূরণ পান, সে ব্যাপারে বিআরটিএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে অন্তত ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জন্য একধরনের গ্লানি ও ব্যর্থতা। ২০১৫-২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গড়ে ২৭ জন নিহত ও ৩৮ জন আহত হন।’
গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি। ‘মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নবমবারের মতো এবার পালিত হচ্ছে দিবসটি। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘৬০ ঘণ্টার এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা করব। আপনি যখন প্রশিক্ষণ নেবেন, আমরা প্রশিক্ষণের একটা ভাতাও আপনাদের দেব।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমাদের সড়কে এই যে দুর্ঘটনা এবং যানজট হয় এগুলোর আসল কারণটা কী? এটা আমরা কিন্তু সবাই জানি। যানজট এবং দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ড্রাইভাররা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না। সড়ককে নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করতে হলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভার হতে হবে। এ জন্য আমরা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার যে পদ্ধতি এটাকে আমূল পরিবর্তন করছি। এখন যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে এটার মূল হবে প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার একটা কমিটি আছে, আমরা সেই কমিটি বাদ দিচ্ছি।’
তাহলে এখন আপনারা কীভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেনÑ এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘অন্য দেশে যেভাবে মানুষ লাইসেন্স পায়। লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম ও পূর্বশর্ত হচ্ছে আপনাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। এ জন্য আমরা বলেছি, সামনে লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে ৬০ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’ বিআরটিএকে নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্থা থেকে সেবামূলক সংস্থায় পরিণত করতে চাই মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মোটামুটি বেশির ভাগ কাজ বিআরটি থেকে হস্তান্তর করে ড্রাইভিং ইনস্টিটিউটে দিয়ে দেব। সুতরাং বিআরটিএর যে একটা নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা, সেটা থাকবে না।’
সড়ক দুর্ঘটনার বেশির ভাগই মোটরসাইকেলে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মোটরসাইকেলের ব্যবহার বাড়ছে, সেহেতু এ দুর্ঘটনার হার এবং মৃত্যুর হারও বাড়ছে। আমাদের হেলমেটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেসব সড়কে নির্মাণকাজ চলছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছেÑ সেসব এলাকায় আমরা ১০ হাজার হেলমেট দেব। আশা করব এর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি অনেকটাই কমে যাবে।’
ফাওজুল কবির আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে না পারা আমাদের জন্য একটা ব্যর্থতা। সংখ্যাটা কিন্তু বেশ বড়। বাংলাদেশে প্রতিদিন ১৫টি করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, এতে নিহত হচ্ছেন গড়ে ২৭ জন। এটা একটা গ্রিন স্ট্যাটিসটিক্স। এটা আমরা কোনো অবস্থাতেই চলতে দিতে পারি না। সম্প্রতি মোটরসাইকেল ব্যবহারের বাড়ার কারণে এ দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনায় যখন একটা পরিবারের আয় উপার্জনের মানুষটি চলে যায়, তখন তো পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যায়। এ জন্যই সড়ক আইনে পরিবারকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার একটা আইনি বিধান আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটা পরিবার পায় না। আমরা বিআরটিএকে বলছি, আমরা একটা টার্গেট দেব, এ সময়ের মধ্যে এত শতাংশ লোকের পরিবারকে সহায়তা দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার স্থানগুলো চিহ্নিত করে এগুলো যদি অ্যালাইনমেন্টের সমস্যা থাকে সেই সমস্যা আমরা দূর করতে চেষ্টা করব। সতর্কতামূলক যে চিহ্নগুলো সেগুলো আমরা দেব। পুলিশের জন্য এ প্রকল্পের আওতায় কিছু যানবাহন দেওয়া হবে। নিয়মিতভাবে সড়কে যাতে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিনিধিরা নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় অ্যাম্বুলেন্স কিনছি, যেগুলো হাইওয়েতে থাকবে। যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়।’
এ সময় সড়ক উপদেষ্টা আরও বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হচ্ছে এবং এই অভিযান আরও বাড়ানো হবে। তিনি গাড়ির মালিকদের ফিটনেস ঠিক রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন কোনো অবস্থাতেই সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। কারণ, এটি দুর্ঘটনার বড় কারণ। মোটরসাইকেল বিষয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হেলমেট ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এবার জাতীয় সড়ক দিবস উপলক্ষে ১০ হাজার মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে হেলমেট বিতরণ করা হবে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় সড়ক নির্মাণকাজ চলছে বা মানুষ ভোগান্তিতে আছে। সড়ক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, সড়ক নিরাপত্তা শুধু সড়ক বিভাগের দায়িত্ব নয়, বরং এটি করতে হবে সব সংস্থার সমন্বয়ে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন