- আওয়ামী আমলে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে ছিল গভীর সখ্য
- আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুনভাবে তৈরি করেন সিন্ডিকেট
- দেশ থেকে পালানো আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে রয়েছে নিয়মিত যোগাযোগ
- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও পাবনাসহ দেশের সাত স্থানে নিজ নামে রয়েছে শতকোটি টাকার সম্পদ
- মোটা অঙ্কের টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশেও সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ
- তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকে সম্প্রতি হয়েছে অভিযোগ দাখিল
- নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) জিম্মি সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) এনায়েত উল্লাহ সিন্ডিকেটের কাছে। তিনি টেন্ডার বাণিজ্য, জরুরি প্রকল্পের নামে নতুন প্রকল্প তৈরি, বদলি, প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধিকরণ, প্রকল্পের নকশা অনুমোদন, ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। দুদক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। শুধু দুদকেই নয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ফাইনানসিয়াল ইনটেলিজেন্সি বরাবর এ অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুসারে, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত এনায়েত উল্লাহ। আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে ছিল তার গভীর সখ্য। আর সেটাকে পুঁজি করে বাপাউবোতে নিজের মতো করে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই তার অবৈধ কাজ পরিচালনা হতো। শুধু তাই নয়, আওয়ামী আমলে প্রশাসনেও ছিল তার ব্যাপক দাপট। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করতেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও এনায়েত উল্লাহর কিছুই হয়নি; রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সেই আগের মতোই নিজের কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা যায়, পুরো বাপাউবো তার হাতের মুঠোয়। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। পাশাপাশি আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্যদের নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন সিন্ডিকেট।
অভিযোগপত্রের তথ্যানুসারে, এনায়েত উল্লাহর গ্রামের বাড়ি পাবনার আটঘরিয়ায় ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭টি নির্দিষ্ট স্থানে তার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে তিনি বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস করেন।
অভিযোগে সূত্রে জানা গেছে, এনায়েত উল্লাহ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বাপাউবো) কর্মরত থাকা অবস্থায় রাজধানীর আদাবরে ৪ কাঠা জমিতে ৩ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যার বাড়ি নং-৪১ সি, রোড নং-৭, শেখেরটেকের পিসি কালচার হাইজিং সোসাইটিতে অবস্থিত। বাড়িটি বর্তমানে বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় কেন্দুয়া পৌর ভূমি অফিসের অধীনে মৌজা নং-দিঘলিয়া-১৬৬, হোল্ডিং নং-৩২৪৯, খতিয়ান নং-৩০৪৯, জমির পরিমাণ ৪ দশমিক ৬২ শতক, নিজ নামে কেনেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচল উপজেলায় ভোলাব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে ৮ দশমিক ২৫ শতক নিজ নামে কেনেন। যার মৌজা নং-কুতুবপুর-১৬০, হোল্ডিং নং-৬০৩৮, খতিয়ান নং-৬০৩৯। এ জমির বর্তমান আনুমানিক মূল্য বাড়িসহ প্রায় ৮ কোটি টাকা।
দুর্নীতিবাজ এ মহাপরিচালক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় ঢাকা জেলার অন্তর্গত সাভার উপজেলার আমিন বাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে মৌজা নং-বগবরদেশী-২৫০, হোল্ডিং নং-২২৮৪৬, খতিয়ান নং-২২৪৮৭ জমির পরিমাণ ১৬ দশমিক ০৮৭৫ শতক নিজ নামে ক্রয় করেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য বাড়িসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এ কর্মকর্তা নিজ গ্রাম পাবনায় গড়ে তুলেছেন সম্পত্তির পাহাড়। পাবনা জেলার অন্তর্গত পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে মৌজা নং-সাহাদিয়ার-২০, হোল্ডিং নং-১৯৫৬, খতিয়ান নং-১৯৫৬ জমির পরিমাণ ৮১ দশমিক ৫০ শতক নিজ নামে কেনেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য বাড়িসহ প্রায় ৮ কোটি টাকা।
ফ্যাসিস্ট আশীর্বাদ পুষ্ট এই কর্মকর্তা নিজ গ্রাম পাবনা জেলার অন্তর্গত আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে মৌজা নং-বেরুয়ান-২৫, হোল্ডিং নং-১১৮৮, খতিয়ান নং-৯০ জমির পরিমাণ ৭৭ শতক নিজ নামে ক্রয় করেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য বাড়িসহ প্রায় ১২ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও পাবনা জেলার অন্তর্গত পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে মৌজা নং-চর সাহাদিয়ার-৩৪, হোল্ডিং নং-৪৫২, খতিয়ান নং-৫৩/১৬২ জমির পরিমাণ ৪৪ শতক নিজ নামে ক্রয় করেন। যার বর্তমান আনুমানিক মূল্য বাড়িসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এসব ছাড়াও এনায়েত উল্লাহর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এ ছাড়াও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এনায়েত উল্লাহ বড় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। যা দিয়ে সব ধরনের অপরাধ কাজ পরিচালনা করেন। শুধু তাই নয়, প্রশাসনেও রয়েছে তার যোগাযোগ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি নতুনভাবে সিন্ডিকেট তৈরি করেন। যাদের দিয়ে বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অবৈধ কাজ পরিচালনা করছেন। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এভাবে দিন দিন তার দুর্নীতি বেড়ে চলেছে।
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) মহাপরিচালক (ডিজি) এনায়েত উল্লাহর মোবাইলে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কিংবা ম্যাসেজের উত্তরও দেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন