ঢাকা শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমছে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

শীতকালীন আগাম সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দামে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। সব ধরনের সবজি কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি ৮০ টাকা দামের নিচে কোনো সবজি বাজারে দেখা যায়নি। তবে জোগান বাড়লেও দাম কমছে না মাছের। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। চড়া পোলট্রি মুরগির বাজারও। ব্রয়লারের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এ জন্য পাইকার ও খামারিদের দুষছেন তারা। এদিকে, আজ শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব জেলা-উপজেলায় ডিম ও মুরগির খামার বন্ধ করা হবে এবং ডিম ও মুরগি বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। 
গতকাল শুক্রবার নিউমার্কেট, হাতিরপুল, শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায় সবজির দামে স্বস্তি ফিরেছে। শীতের আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় দামও অনেকটাই কমেছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শিম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুলা কেজিতে ১০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ছোট আকারের ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা ও ধুন্দল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজিতে ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, দেশি শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও হাইব্রিড শসা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। 
সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন শান্তিনগর বাজারের তরকারি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত কিছুদিনের চেয়ে সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। পাইকারি বাজারে সবজি সয়লাব।’ দাম আরও কমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সবজির দাম কমায় ভোক্তাদের মধ্যেও স্বস্তি দেখা গেছে। তারা বলছেন, শীতের আগমনে বাজারের চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। দাম আরও কমে আসবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
নাজমুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কমেছে। গত সপ্তাহে শিম ২৫০ গ্রাম কিনেছিলাম, আজ সেই দামেই ৫০০ গ্রাম কিনলাম।’ আগামী সপ্তাহে দাম আরও কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
বাজারগুলোতে লেবুর হালি ২৫ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ৫০ টাকা কমে ২৫০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, চালকুমড়া ৪০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে লালশাক ২০ টাকা আঁটি, লাউশাক ৪০ টাকা, কলমিশাক ২ আঁটি ৩০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও ডাঁটাশাক দুই আঁটি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে আলু ২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 
এদিকে, সাগর-নদীতে জাল ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠেছে গত ২৬ অক্টোবর। তাই চাষের মাছের পাশাপাশি বাজারে সামুদ্রিক মাছের জোগান বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে খাল-বিলের মাছের সরবরাহ। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও বাজারে ইলিশের তেমন দেখা মিলছে না, দামও বেশ চড়া। তবে জোগান বাড়লেও মাছের দামে কোন প্রভাব পড়েনি। গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের বাড়তি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। বেশির ভাগ মাছের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজির নিচে মিলছে না রুই-কাতলা। আইড়-বোয়ালের দেখা মিললেও গুনতে হবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি। হাজার টাকা কেজির নিচে মিলছে না ভালো মানের চিংড়ি।
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কাতলা মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা। ছোট ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, বড় ট্যাংরা ৯০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, কই মাছ ২০০ টাকা, ছোট সরপুঁটি ২০০ টাকা এবং বড় সরপুঁটি ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর নতুন করে চড়েছে পোলট্রির বাজার। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার কেজির নিচে মিলছে না সোনালি জাত। দেশি মুরগির দাম হাঁকা হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি। পাইকারি ও খামার পর্যায় থেকে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  
বাজারগুলোতে দেশি আদা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা ও ইন্ডিয়ান ১৬০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা ও খেসারির ডাল ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, হাঁসের ডিম ২১০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ১১০ টাকা এবং সোনালি কক মুরগির ডিমের হালি ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮৫ থেকে ৯২ টাকা, নাজিরশাইল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে আজ শনিবার থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব জেলা-উপজেলায় ডিম ও মুরগি বিক্রি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। 
জানা গেছে, করপোরেট সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে পোলট্রি খাত ধ্বংসের পথে। ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) ৭ দফা দাবি কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানায়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব জেলা-উপজেলায় ডিম ও মুরগির খামার বন্ধ থাকবে। ফলে সরবরাহ করা হবে না ডিম ও মুরগি।
সুমন হাওলাদার জানান, বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ৭ দফা দাবি হলোÑ করপোরট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে ফিড, বাচ্চা, মেডিসিন ও ভ্যাকসিনের দাম সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করতে হবে। করপোরেট প্রভাবমুক্ত, ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনকে নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিপিএ জানায়, কয়েকটি করপোরেট গ্রুপের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশে ডিম ও মুরগির দাম বেশি। ভারতে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ মাত্র ৫ টাকা, এক কেজি ব্রয়লার ৮০-৯০ টাকা। অথচ বাংলাদেশে ডিম ১০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬৫ টাকা খরচে উৎপাদন হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে কাঁচামাল সস্তা হলেও দেশীয় সিন্ডিকেট অতি মুনাফার প্রতিযোগিতায় বাজার অস্থিতিশীল করে রেখেছে।