সোমবার, ০৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

অকালের বৃষ্টিতে কৃষকের কান্না

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম

অকালের বৃষ্টিতে কৃষকের কান্না

ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে টানা ভারি বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়ায় রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে গেছে একরের পর একর জমির রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজির খেত। ভেসে গেছে বিভিন্ন বিল-পুকুরের মাছ। বাতাসে নুয়ে পড়েছে ধানগাছ। এমন পরিস্থিতিতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষকেরা। তারা বলছেন, ঘরে তোলার আগমুহূর্তে হঠাৎ বৈরী আবহাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। তারা বলছেন, অসময়ের বৃষ্টিতে ফলন বিপর্যয়সহ ঋণ নিয়ে চাষাবাদের কারণে আগামী বছর সমস্যায় পড়বেন তারা। সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস জানিয়েছে, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সহায়তা করা হবে। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের ব্যুরো অফিস ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর নিয়ে প্রতিবেদন।

রাজশাহী :

চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ভালো ফলনের আশা করেছিলেন কৃষকেরা। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই আমন ধান ঘরে ওঠার কথা ছিল, কিন্তু অসময়ের টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন ও শাক-সবজির খেত পানিতে ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, গত বুধবার থেকে রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের উপজেলাগুলোয় থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। প্রথম দুই দিন ভারি বৃষ্টি না হলেও পরের দুই দিন প্রচুর বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যায়। রাতে বাড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। এতে মাঠের পাকা আমন ধানের গাছ ভেঙে পানির নিচে তলিয়ে যায়। জেলার তানোর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, গোদাগাড়ী উপজেলায় এবার অধিক পরিমাণ জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন কৃষকেরা। তবে বেশি ক্ষতি হয়েছে পবা, তানোর, বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, পবা উপজেলার নি¤œাঞ্চলের মাঠে মাঠে সোনালি রঙে পাক ধরা রোপা আমন দুই দিনের ঝোড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টির কারণে মাজা ভেঙে জমিতে পানির নিচে পড়ে রয়েছে। তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া, কামারগাঁ, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় রোপা আমন ধান ডুবে গেছে। জমির পানি দ্রুত নিষ্কাশন না হলে বেশি ক্ষতি হবে বলে জানান কৃষকেরা। এ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। এ ছাড়া ভারি বৃষ্টিতে ডুবেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। পুকুর ও খালের পানি ঢুকে পড়েছে গ্রামে। এতে অনেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন।

তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কামারগাঁও ব্লকের কামারগাঁওয়ে ৩০ হেক্টর, মাদারীপুরে ৮ হেক্টর, ছাঐড়ে ১৪ হেক্টর, কৃষ্ণপুরে ৫ হেক্টর; পাঁচন্দর ব্লকের মোহাম্মদপুরে ৭ হেক্টর, চাঁদপুরে ১০ হেক্টর এবং চান্দুড়িয়া ব্লকের চান্দুড়িয়ায় ১৫ হেক্টর, সিলিমপুরে ৫ হেক্টরে রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে। এ ছাড়া তানোর পৌরসভায় ডুবেছে ১১০ হেক্টর। সব মিলে ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে ধান ডুবেছে পুরোপুরিভাবে ৪৬ হেক্টর এবং আংশিক ডুবছে ১৫৭ হেক্টর জমি।

এদিকে বাগমারা ও তার পাশের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোন্থার প্রভাবে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতে মাঠ-ঘাটে ফসলের জমিতে পানি থইথই করছে। গত বুধবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত এলাকায় দফায় দফায় হালকা বৃষ্টি হলেও গত শনিবার রাতে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এলাকার কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অতিবর্ষণে মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে রবি মৌসুমের উঠতি রোপা আমন, রোপণকৃত পেঁয়াজ, সরিষা, পানের বরজ, মরিচ, বেগুন, শিমসহ নানা ফসল ও পুকুর ভেসে গিয়ে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বালানগর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, উপযুক্ত সময় পেয়ে পাঁচ থেকে ছয় দিন আগে সরিষা রোপণ করা হয়। কিন্তু বপনের পর দিন থেকে বৃষ্টিতে জমিতে পানি আটকে আছে। 

বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চলতি মৌসুমে শাক-সবজি, মরিচসহ বেশ কিছু ফসলে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার কথা থাকলেও প্রচুর বৃষ্টিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া তানোর-গোদাগাড়ীর কোনো কোনো এলাকার হঠাৎ বন্যায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, দ্রুত জমির পানি নিষ্কাশন করা গেলে বৃষ্টিতে ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর রাজশাহীতে ৮৩ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় ভালো ফলন হবে আশা করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ :

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান, সরিষা, পেঁয়াজ, মাসকলাই এবং শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের কয়েকটি এলাকা হাঁটুপানির নিচে তলিয়ে যায়, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। হঠাৎ বৃষ্টিতে কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সরকারের সহায়তা দাবি করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, জেলায় ১৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেনÑ এবার ধান, আলু, সরিষা, মাসকলাই, শাক-সবজি, ভুট্টা, স্ট্রবেরি ও রসুনের খেত ডুবে গেছে। এর ফলে ভবিষ্যতে নিত্যপণ্যের দামও বাড়তে পারে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

নওগাঁ :

জেলার নিয়ামতপুর, রাণীনগর ও মান্দায় রাতভর ভারি বৃষ্টিপাতে ধান ও সবজির খেত ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এতে কৃষক ও মাছচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। নিয়ামতপুরে গত শুক্রবার রাতভর ভারি বৃষ্টিতে মাঠের প্রায় ২৫ শতাংশ ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে এবং প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান ডুবে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটার কথা ছিল। হঠাৎ ভারি বৃষ্টির কারণে ফসলের খেত তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

জয়পুরহাট :

টানা বৃষ্টিতে জেলায় পাকা আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকায় পানিতে ডুবে গেছে পাকা ধান ও আগাম সবজির খেত। বিশেষ করে আগাম জাতের আলুসহ শীতকালীন রবিশস্যের খেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় চাষে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ক্ষতি। এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতিতে প্রান্তিক কৃষকেরা চরম হতাশায় ভুগছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। গতকাল রোববার সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে আগাম জাতের পাকা ধান বাতাসে নুয়ে পড়েছে, কোনো কোনো জমিতে বৃষ্টির পানিতে ফসল নিমজ্জিত হয়ে আছে। মাঠে এরই মধ্যে আগাম আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, টমেটো, বেগুন ও মুলার আবাদ হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে শাক-সবজির খেতে গাছ পচে যাওয়ার উপক্রম।

আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দীপুর ইউনিয়ের কৃষক গোপাল চন্দ্র বলেন, ‘আগাম আলু লাগিয়েছিলাম ভালো দামের আশায়। প্রতি বিঘায় প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। টানা তিন দিনের মধ্যে শনিবার রাতের বৃষ্টিতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখনো কিছু জমিতে পানি জমে আছে। এতে চারা পচে যেতে পারে। ফলে আলু না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বৃষ্টি আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। সরকারের সহযোগিতা না পেলে আগামী মৌসুমে আলু চাষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আগাম জাতের আলু, সবজি ও ধানের ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব পানি অপসারণ করার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমন ধান পাকার মৌসুম, অনেক স্থানে কৃষক ধান কাটা শুরু করেছেন। আবার শীতকালীন রবিশস্যের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজও চলছিল। কার্তিকের এই বৃষ্টির কারণে এসব কাজ অন্তত তিন-চার দিন পিছিয়ে যাবে।’

রংপুর :

বৃষ্টিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় আগাম আলুচাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করা জমিতে বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে মাটির নিচেই বীজ আলু পচে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন শত শত কৃষক।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত দুই দিনে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে গত শুক্রবার ২১ এবং শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে।

মিঠাপুকুর উপজেলার ধাপের হাট এলাকার কৃষক খিতিশ চন্দ্র বর্মন বলেন, ‘আমনের যে ধানগাছ শুয়ে পড়েছে, তাতে কয়েক দিনের মধ্যেই পোকা ধরবে। তখন ধান চিটা হয়ে যাবে। এত পরিশ্রমের ফসল এভাবে নষ্ট হতে বসেছে, ভাবতেই পারছি না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নি¤œচাপের প্রভাবে জেলার পাঁচ উপজেলায় অন্তত ৭৫ হেক্টর জমির ধানগাছ ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছিÑ যেসব জমিতে ধান শুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিতে। এতে ক্ষতি কিছুটা কমবে।’ তিনি আরও বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে এবং কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

লালমনিরহাট :

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার পাঁচ উপজেলায় পাকা ও আধাপাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলহানীর শ্বঙ্কায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকদের কপালে। কৃষিনির্ভর এ জেলার কৃষকদের উৎপাদিত উঠতি আমন ধান হালকা বৃষ্টি আর বাতাসে নুয়ে পড়েছে। অনেক খেতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ধান। কিছু আমন ধান নুয়ে পড়ে ডুবে আছে পানিতে।

কৃষকেরা জানান, কয়েক দিন ধরে হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা বাতাস বয়ে যায় জেলাজুড়ে। এতে উঠতি আমন ধান নুয়ে পড়েছে মাটিতে। কিছু খেতে ডুবে আছে পানিতে, যা আর ঘরে তোলার মতো নয়। নুয়ে পড়া পাকা ধান কেটে নিলেও আধাপাকা ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। আগাম জাতের আমন ধান কাটা শুরু হলেও পুরোদমে ধান মাড়াই শুরু হতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন লাগবে। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি আর বাতাসে নষ্ট হলো আমন ধান। এমনকি পচে নষ্টের আশঙ্কা করছেন গবাদি পশুর খাদ্য ধানগাছ তথা খড়। ঋণ পরিশোধ আর উৎপাদন খরচ দূরের কথা, পরিবারের খাবার জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কৃষক নুয়ে পড়া ধানগাছ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। কেউ খেত থেকে পানি বের করে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নষ্টের পথে থাকা কষ্টের ফসল রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টাও করছেন কৃষকেরা। তারা জানালেন, এতে গবাদি পশুর জন্য খড়টুকু যদি পাই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাইখুল আরেফিন বলেন, চলতি বছর জেলার ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় নুয়ে পড়া আমন খেতের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। যেসব ধান নুয়ে পড়েছে, সেগুলো গোছা করে বেঁধে দিলে কিছুটা ক্ষতি কমাতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বগুড়া :

জেলার নন্দীগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টি ও বাতাসে চলতি মৌসুমের আমন ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পাকা ও আধাপাকা ধান ঘরে তোলার আগমুহূর্তে নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

নীলফামারী :

হঠাৎ বৃষ্টিতে জেলায় আমন ধান ও শীতকালীন শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। মাঠের আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। শুধু ধান নয়, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ ও আলুখেতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

দিনাজপুর :

জেলার ফুলবাড়ীতে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় মাটিতে নুয়ে পড়েছে রোপা আমন ধান। আধাপাকা এসব ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া আগাম আলু ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কদিন বাদেই যে ফসল ঘরে উঠত, তা নিয়ে এখন চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮৮ হেক্টর জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এ ছাড়া আগাম রোপণ করা ৫ হেক্টর আলু এবং ৬ হেক্টর শাক-সবজির ক্ষতি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম :

জেলার নাগেশ্বরীতে টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হওয়ায় নুয়ে পড়েছে রোপা আমনের খেত। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি রোপা আমন মৌসুমে ২৪ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয় ২৪ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে প্রায় সব জমিতে ধানের শিষ বের হয়েছে। কিছু জমির ধান অগ্রিম পেকেছে। আর কয়েক দিন পরে তা কৃষকের ঘরে ওঠার কথা ছিল। এর মধ্যে গত বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি ও বাতাস বয়ে যায়। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নুইয়ে পড়েছে রোপা আমন ধানের গাছ। কৃষকদের আশঙ্কা, খেতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে নুয়ে পড়া ধান।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে তাদের জমির ধানগাছ হেলে পড়েছে। বৃষ্টি না কমলে তা খেতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

উপজেলা সিনিয়র কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন বলেন,            ‘কিছু জমির ধানগাছ হেলে পড়েছে। আমরা কৃষকদের সেগুলো তুলে আঁটি বেঁধে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’

শেরপুর :

কার্তিক মাসে হঠাৎ টানা ভারি বৃষ্টিতে শেরপুর সদরসহ চার উপজেলার আমন ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একটানা বৃষ্টিতে নিচু এলাকার অমন ধানের খেত তলিয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, টমেটোসহ আগাম শীতকালীন সবজি। পাশাপাশি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, মুলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির গাছও মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সদ্য রোপণকৃত আলু, সরিষা, পেঁয়াজ ও রসুনের বীজতলা নিয়ে কৃষকেরা পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।

কৃষকেরা জানান, টানা বৃষ্টিতে বেশির ভাগ নিচু জমিতেই পানি জমে রয়েছে। ফসলের খেত থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন তারা। এ ছাড়া মাঠের আধাপাকা ধান হেলে পড়েছে। কেটে ফেলা আমন ধান জমিতে পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে কাক্সিক্ষত দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া আগামী দিনে গোখাদ্যের সংকটের কথাও জানিয়েছেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কার্তিক মাসে সাধারণত হালকা বৃষ্টি হলেও নি¤œচাপের কারণে এ বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন আমরা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সহায়তা করা হবে।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!