বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০১:২২ এএম

কুয়াশা ভেজা মাটিতে পেঁয়াজের সুবাস

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০১:২২ এএম

কুয়াশা ভেজা মাটিতে পেঁয়াজের সুবাস

নভেম্বরের সকালে হালকা কুয়াশায় মোড়া গ্রাম। জমির ধারে দাঁড়িয়ে আছেন অনেক কৃষক। হাতে ছোট ছোট চারা, চোখে স্বপ্ন আর মুখে হাসি। ‘এই চারা তাদের আশার প্রতীক,’ বলে মনে করেন তারা। সত্যি তাই। এই চারা শীতকালীন পেঁয়াজের। সঠিক যতœ পেলে কয়েক মাসের মধ্যেই এরা গাঢ লালচে পেঁয়াজে পরিণত হবে, যা বাজারে ভালো দামে বিক্রি হবে। শীতকালীন পেঁয়াজ কেবল ফসল নয়, এটি কৃষকের ধৈর্য, যতœ এবং পরিকল্পনার ফল।

জমির প্রস্তুতি: স্বপ্নের শুরু

‘মাটির যতœ না নিলে পেঁয়াজ বড় হয় না,’ বলেন অনেক চাষিরা। শীতকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। জমি তিনবার চাষ করে গোবর সার মেশানো হয়। উঁচু জমি নির্বাচন করা হয়, যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে এবং গাছ রোগবালাইতে আক্রান্ত না হয়। চাষিরা জমি সামান্য বাঁকা করে, যাতে সেচের পানি পুরো বেডে ছড়িয়ে পড়ে। জমি নরম ও ঝরঝরে থাকলে চারা সহজে স্থির হয় এবং মাটি থেকে পুষ্টি সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে।

বীজ থেকে চারা: প্রথম আশার আগমন

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বীজ ছিটিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। প্রতি শতকে প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। বীজ ছিটিয়ে হালকা খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে চারা সবুজ হয়ে ওঠে, শক্ত হয়ে যায়। চারা বড় হলে বোঝা যায় এখন রোপণের সময়। চারা যদি নরম বা দুর্বল থাকে, তবে তা পেঁয়াজের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই চারা পরিচর্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রোপণ ও যতœ: ধৈর্যের গল্প

নভেম্বরের শেষের দিকে চারা রোপণ করা হয়। সারির দূরত্ব: ১৫ সেমি; গাছের দূরত্ব: ১০ সেমি। রোপণের এক সপ্তাহ পর প্রথম সেচ। এরপর নিয়মিত হালকা সেচ দিয়ে চারা সতেজ রাখা হয়। আগাছা দেখা দিলে তা হাত দিয়ে তুলে ফেলা হয়। চাষিরা বলেন, ‘নিয়মিত সেচ, পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া পেয়াজ বড় হয় না।’

সার ও পরিচর্যা: পুষ্টির গল্প

শীতকালীন পেঁয়াজ চাষে সার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিএসপি ও গোবর জমি তৈরির সময় মেশানো হয়, ইউরিয়া ও এমওপি তিন ভাগে প্রয়োগ করা হয়, মাটি চাপা দিয়ে চারা শক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে চারা দ্রুত শক্ত হয়ে যায়, পাতার রঙ গাঢ় সবুজ হয় এবং ফলন ভালো হয়।

রোগ-পোকা: চ্যালেঞ্জের মুহূর্ত

শীতকালীন পেঁয়াজে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব সাধারণ। পাতার আগা শুকিয়ে গেলে পাতা ঝলসানো রোগ ধরা পড়ে। কৃষক কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করেন। থ্রিপস বা অন্যান্য পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। একটি ছোটো ভুলও ফলন কমিয়ে দিতে পারে, তাই প্রতিদিন জমি মনিটর করা অপরিহার্য।

ফসল তোলা: স্বপ্নের পেরেশানি

ফাল্গুনের শুরুতে পেঁয়াজ উত্তোলন করা হয়। পাতাগুলো যখন মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ে, বোঝা যায় ফসল প্রস্তুত। উত্তোলনের পর পেঁয়াজগুলো ছায়ায় শুকানো হয়, প্রতি বিঘায় প্রায় ১২-১৫ মণ ফলন হয়, বাজারে বিক্রি করে কৃষকের আয় বাড়ে। চাষিরা বলেন, ‘প্রতি বীজের প্রতিটি চারা যেন আমাদের পরিশ্রমের গল্প বলে।’

শেষ কথা

শীতকালীন পেঁয়াজ কেবল ফসল নয়। এটি কৃষকের পরিশ্রম, আশা, এবং ধৈর্যের গল্প। শীতের মাটিতে পেঁয়াজের সুবাস যেন বলছে: ‘কঠোর পরিশ্রমের ফল সবসময় মিষ্টি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!