আরএসএফ গত ২৬ অক্টোবর সুদানি সেনাবাহিনীকে (এসএএফ) সরিয়ে এল-ফাশের দখল করে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দখলের পর থেকে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। সেখানে বহু বেসামরিক হত্যাকা-, যৌন সহিংসতা ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুদ-ের খবর পাওয়া গেছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট ছবিতে ‘রক্তের দাগ’ ও গণহত্যার চিহ্ন দেখা গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) সতর্ক করে বলেছে, ১৮ মাস ধরে আরএসএফের অবরোধের কারণে এল-ফাশেরে কোনো মানবিক সহায়তা পৌঁছায়নি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাও বন্ধ। বিশ্বজুড়ে নিন্দার মুখে আরএসএফ নেতারা এ ‘গণহত্যাকে’ তুচ্ছ করে দেখাতে চাইছে এবং মিত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চলছে দোষ চাপানোর চেষ্টা। তাদের নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদতি) তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিলেও রেমন্ড এতে আস্থা রাখেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তারা যদি সত্যিই তদন্ত চায়, তবে ঘটনাস্থলে জাতিসংঘ ও রেড ক্রসকে ঢুকতে দিতে হবে। আরএসএফকে নিজেদের কর্মকা-ের তদন্ত করতে দেওয়া যায় না।’ রেমন্ডের মতে, এল-ফাশেরে মাত্র ১০ দিনে যত মানুষ নিহত হয়েছে, তা গত দুই বছরে গাজায় নিহত সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দখলের পর থেকে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। সেখানে বহু বেসামরিক হত্যাকা-, যৌন সহিংসতা ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুদ-ের খবর পাওয়া গেছে। সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের শহর এল-ফাশেরে গণহত্যা চালানোর পর আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সেখানে গণকবর খুঁড়তে শুরু করেছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক এটিকে গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন।ইয়েলের স্কুল অব পাবলিক হেলথের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল রেমন্ড মঙ্গলবার আল জাজিরাকে জানান, আরএসএফ শহরের সর্বত্র গণকবর খনন এবং লাশ সংগ্রহ করা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘তারা এই গণহত্যার চিহ্ন মুছে ফেলতে চাইছে।’ সুদানের গৃহযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধ ও সহিংসতা বন্ধে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার কাতারের দোহায় বিশ্ব সামাজিক উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সুদানের কেন্দ্রীয় কর্দোফান অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর আল-ওবাইদ। সেখানে একটি জানাজায় আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) ড্রোন হামলায় ৪০ জন নিহত হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় এ তথ্য জানিয়েছে। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির আল-ফাশার শহরে আরএসএফের সাম্প্রতিক হামলায় শত শত বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার পর নতুন করে এই হামলার খবর এলো। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস বলেছে, ‘কোরদোফান অঞ্চলেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।’ করদোফান রাজ্যে সরকার বলেছে, গ্রামের একটি জানাজার তাঁবু লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। নিহত ৪০ জনের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছেন। রাজ্য সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেছে, তারা অবিলম্বে আরএসএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করুক। আধাসামরিক বাহিনীটি নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে জাতিগত ও বর্ণগতভাবে অপরাধ সংঘটন করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অনুমান করেছে, অক্টোবরের শেষের দিক থেকে উত্তর ও দক্ষিণ কর্ডোফান অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার কারণে ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন