বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জ্ঞান আহরণের কেন্দ্র এখন ভূতুড়ে ঘর

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০১:০৪ এএম

জ্ঞান আহরণের কেন্দ্র  এখন ভূতুড়ে ঘর

**** আখাউড়া পাবলিক লাইব্রেরি
*** দরজা-জানালা ভেঙে এক যুগের বেশি ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায়
*** ভাঙছে ভবনের দেয়াল, চারপাশের ময়লা-আবর্জনায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ
*** আগের মতো নেই তাক ভরা বই, নেই পাঠকের পদচারণা
*** সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লাইব্রেরিটি সংস্কারের দাবি স্থানীদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় একমাত্র জ্ঞান আহরণের স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত পাবলিক লাইব্রেরিটি বর্তমানে পরিত্যক্ত ও ভূতুড়ে ঘরে পরিণত হয়েছে। দরজা-জানালা ভেঙে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে লাইব্রেরির চার পাশের দেয়াল ভাঙা, ভেতর বাহির চারদিকে ময়লা-আবর্জনায় ছড়িয়ে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, লাইব্রেরির সামনে গেলে নাকে রোমাল চেপে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় লাইব্রেরি ছিল জ্ঞান ও শিক্ষার কেন্দ্র। এলাকার নানা বয়সি মানুষ সকাল-বিকেল আসতেন বই, গল্প, উপন্যাস, ধর্মীয় ও জাতীয় পত্রিকা পড়তে। সকাল-বিকেল সব সময় পাঠকের ভিড় থাকত। তবে এখন সেখানে আর কোনো পাঠকের পদচারণা নেই, নেই হাকডাক বা বইয়ের কোনো চিহ্ন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে এক মনোরম পরিবেশে পৌর শহরের সদর ভূমি অফিস সংলগ্ন স্থানে পাবলিক লাইব্রেরিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। লাইব্রেরিতে জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকা, কোরআন, হাদিস, ইসলামি কিতাব, ম্যাগাজিন, গল্প উপন্যাস, রচনা, কবিতাসহ বিভিন্ন বই স্থান পেয়ে ছিল। প্রতিষ্ঠা লাভের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রায় ২ হাজারের ওপর বই ছিল। তা ছাড়া পাঠাগারের দেয়ালের মধ্যে কবি বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক নেতা, রাজাসহ স্বনামধন্য ব্যক্তিদের ছবি ও জীবনী ছিল। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই এই লাইব্রেরিটির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সব সময় স্থানীয় পাঠকে মুখর থাকতো এ লাইব্রেরিটি। এক কথায় লাইব্রেরিকে ঘিরে বিভিন্ন শ্রেণি পেশা লোকদের মিলনমেলা বসত। বর্তমানে এই লাইব্রেরিটি ১৫ বছরের ওপর ধরে কোনো কার্যক্রম নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লাইব্রেরিটির ভেতরে এখন শুধু গাছ-গাছালি আর ময়লা-আবর্জনায় ভরে আছে। দেয়াল থেকে ইট আর সিমেন্টের পলেস্তরাগুলো খসে খসে পড়ছে। দরজা-জানালা নেই। চারদিকে খোলা রয়েছে। ভেতরে নেই কোনো চেয়ার টেবিল আলমিরা আর বই। বর্তমানে এই লাইব্রেরিটি বেহাল দশায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, লাইব্রেরিতে ১৯৯২ সালের দিকে আমি নিয়মিত আসা যাওয়া করতাম। সারা দিন কাজ শেষে বিকেল হলেই এখানে ছুটে এসে পত্রিকা আর বই পড়তাম। এখানে শিক্ষিত লোকদের আসা যাওয়া ছিল বেশি। বেশ কয়েক বছর এখানে নিয়মিত আমার আসা যাওয়া ছিল। আস্তে আস্তে দেখভালের অভাবে এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। এখন কাজকাম নেই। কোথাও বসে গল্প কিংবা বই পড়ব সেই জায়গা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি দ্রুত যেন এই লাইব্রেরিটি সংস্কার করে দেয়।

মো. মুর্শেদ মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ছোট বেলা থেকেই পত্রিকা আর গল্পের বই পড়ার আমার নেশা ছিল। ওই সময় টাকা পয়সার অভাবে বই কেনা হতো না। কিন্তু লাইব্রেরেটি হওয়ার পর নিয়মিত এখানে আসা যাওয়া করতাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়ে দেশ বিদেশের খোঁজখবর জেনেছি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভালো সময় যেত। এখানে ভালো ভালো মানুষের যাতায়ত ছিল। লাইব্রেরিতে আসলে খুবই ভালো লাগতো। দেখভালের অভাবে লাইব্রেরিটি দীর্ঘ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। বর্তমানে লাইব্রেরির এমন বেহাল দশা দেখে নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগে। এই লাইব্রেরিটি স্বপ্নের গল্পের মতো যেন এখন শুধু অতীত হয়ে আছে। নতুন প্রজন্মের লোকেরা জানে না এক সময় এখানে পাবলিক লাইব্রেরি ছিল।

আখাউড়া প্রেসক্লাব সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, এক সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন এই পাবলিক লাইব্রেরিতে এসে পেপার পত্রিকা ও বিভিন্ন রকমের বই পড়ত। সব সময় মানুষের পদচারণ ছিল। যতই সময় সুযোগ পেতাম সেখানে গিয়ে দৈনিক পত্রিকা ও বই পড়তে যাওয়া হতো। দীর্ঘ বছর ধরে এই লাইব্রেরিটি বেহাল দশায় পরিণত হয়ে আছে। এই লাইব্রেরি সংস্কার করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লাইব্রেরিটি সংস্কারের দাবি জানায়।

আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. কফিল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শুনেছি এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। বিষয়টি নজরে এসেছে। লাইব্রেরিটি সংস্কার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!