শেরপুরের সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী উপজেলায় কলা চাষে এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। ধান চাষে ব্যয় বেশি হলেও লাভ তুলনামূলক কম। এমন বাস্তবতায় কৃষকরা ধান আবাদ ছেড়ে কম খরচ, কম পরিশ্রম ও বেশি লাভজনক হওয়ায় ঝুঁকছেন কলা চাষে। বাজারে কলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্বল্প সময়ে আয় বেড়ে যাওয়াই কৃষকদের প্রধান আকর্ষণ।
স্থানীয় কলা চাষিরা জানান, একবার ফল সংগ্রহের পর গাছের পাশ থেকে নতুন কুঁড়ি জন্মায়, যা ভবিষ্যতে চারা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এসব চারা প্রতিটি ৭-৮ টাকায় বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ও হচ্ছে তাদের।
একই জমিতে কলার পাশাপাশি অন্যান্য শাক-সবজি চাষ করাও সম্ভব হওয়ায় দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন চাষিরা। শ্রীবরদীর আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগীÑ ফলে অল্প খরচে অধিক মুনাফা মিলছে। অন্য ফসলের তুলনায় কলায় পোকামাকড় বা ছত্রাকের আক্রমণ কম হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আবুয়ারপাড়া, কলাকান্দা, বিলভরট, রানীশিমূল, লঙ্গরপাড়া, গড়পাড়া, ভেলুয়া, মাদারপুর, পোড়াগর ও দহেরপাড় এলাকায় সাগর ও সবরি জাতের উন্নতমানের কলা চাষ হচ্ছে। চারদিকে তাকালে যেন সবুজ কলা বাগান ছাড়া আর কোনো ফসল চোখে পড়ে না। কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, জৈব সার ও সঠিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফলনের পরিমাণ ও গুণগত মান দুটোই বেড়েছে।
শ্রীবরদীতে উৎপাদিত কলা স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকার পাইকারি বাজার ও দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা পাচ্ছেন ন্যায্য দাম।
আবুয়ারপাড়ার কৃষক আব্বাস আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করে বছরে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। আমি ১ একর জমিতে কলা করেছিÑ খরচ হবে ৭০-৮০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়েই ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে। পাশাপাশি ফুলকপি চাষ করে বাড়তি আয় করছি। ধান চাষে খরচ বেশি, লাভ কমÑ তাই আমরা কলা চাষে ঝুঁকেছি।’ আরেক কৃষক ফজল মিয়া জানান, ‘আগে এসব জমিতে শুধু ধান হতো। এখন সবাই বেশি লাভের আশায় কলা চাষ করছেন।’
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান আকন্দ বলেন, ‘এ পর্যন্ত উপজেলায় ৭৩০ হেক্টর জমিতে কলা আবাদ হয়েছে। যেভাবে চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অল্প সময়েই এ পরিমাণ ১ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা কলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করে পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষকদের যেকোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন