আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণার প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গত রোববার এ নিয়ে কমিশনের সভাও হয়েছে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন তারা। এখন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রস্তুতি অবহিত করা বাকি রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, এরই মধ্যে নাগরিকরা নির্বাচনি কর্মকা-ে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন, যা দেশে নির্বাচনি আমেজ সৃষ্টি করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেছেন, দেশে নির্বাচনের ভাইব এখনো শুরু হয়নি। এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিলের বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, এ জন্য সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হবে কাল ১০ ডিসেম্বর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিয়েছে এবং অনেক তো সময় তাদেরকে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু কিছু প্রস্তুতি আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি। তিনি বলেন, ‘এখন তপশিল ঘোষণা করলে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু এবং যথাসময়ে নির্বাচন হবে। তবে যেটা প্রশ্ন, সেটা হলো, নির্বাচন কেমন হবেÑ সেটা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কারণ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি হবে নাÑ এই প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে নির্বাচনে সহিংস আচরণ, সহিংসতার মাত্রা কোন পর্যায়ে থাকতে পারে, সেগুলো নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপকের মতে, নির্বাচন কমিশন যে পর্যায়ে এসেছে, তাদের পক্ষে নির্বাচন করাটা খুব কঠিন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যদি সফল হয় বা সক্ষম হয়, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। সবাই মাঠে রয়েছে, তারা নির্বাচনি প্রচারণায় তৎপর। জামায়াত তৎপর, এনসিপি তৎপর, বিএনপি তৎপর।
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘ইসির অতীত ইতিহাস অনুযায়ী সাধারণত তপশিলের আগে এ জাতীয় কাজগুলো (রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাকে প্রস্তুতি অবহিত করা) করে থাকে; এটা নতুন কিছু না। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের সামনে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। এসব নিয়ে কী প্রস্তুতি রয়েছে, সবাইকে বলা দরকার, যারা নির্বাচনের অংশীজন রয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানুষ এখনো পুরোপুরি খুশি নয়। ইসি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সরকার থেকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটা ব্রিফিংয়ে পাওয়া দরকার।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এই সদস্য বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিভাজন দেখতে পাচ্ছিÑ সেটা একটা ব্যাপার আছে। তারপরে আদালতে কিছু রিটও আছে। তারপরে এই যে দুইটা নির্বাচন একই দিনে হবে, প্রস্তুতিটা কেমন। যেহেতু এই নির্বাচন কমিশন কখনোই কোনো নির্বাচন আয়োজন করেনি। এগুলো যদি মানুষকে জানাত, তাহলে মানুষ বুঝতে পারত যে নির্বাচন কমিশন সঠিক পথে আছে। ঠিক জায়গায় আছে। ফলে দেশে ইলেকশনের যে ভাইব, সে জিনিস কিন্তু এখনো শুরু হয়নি।’
এবারের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ অর্ধশতাধিক দল অংশ নেবে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ভোটের বাইরে থাকতে হবে। জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিক কয়েকটি দল ইসির সংলাপে ডাক পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে এগোচ্ছে ইসি।
তপশিলের অপেক্ষা, ভাষণ সম্প্রচারের প্রস্তুতি :
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। এ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ভাষণে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করবেন। এই উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর তার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার রেকর্ড করবে।
গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য জানান। তপশিল বিষয়ে সিইসির ভাষণের রেকর্ড প্রসঙ্গে সচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তপশিলের বিষয়ে ভাষণ দেবেন। এটা ১০ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হবে। এ বিষয়ে বিটিভি ও বেতারকে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ইসি জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাষণে সিইসি জনগণকে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ রেকর্ড করা হয়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সরাসরি বিটিভি ও বেতারে তপশিল প্রচার করেন। তবে এবার তপশিল সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করবে ইসি।
নির্বাচনের কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তপশিলের আগে। আর কিছু প্রস্তুতি নিতে হয় তপশিল ঘোষণার পর। তপশিল ঘোষণার আগে যেসব প্রস্তুতি দরকার, সেগুলো এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে আগামীকাল বুধবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি। সাধারণত তপশিল ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এটি এক ধরনের রেওয়াজ। এরপরই তপশিল ঘোষণা করা হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন