ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

বেপরোয়া হুতি, ২০ মাসে ৭০ জাহাজে হামলা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরের জাহাজগুলোয় হামলা চালাচ্ছে। এতে বিশ্বের বড় বড় তেল কোম্পানিগুলো তাদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথে সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে। হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের উত্তাপ আরও বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে দিতে পারে। ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি সশস্ত্র গ্রুপটি ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৭০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে লোহিত সাগরে তারা দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। বর্তমানে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জেরুজালেম পোস্ট জানায়, সর্বশেষ হামলায় একটি জাহাজের বেশ কয়েকজন ক্রুকে হত্যা করে হুতিরা। এখন প্রশ্ন হলো, তারা হঠাৎ কেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং সামনে আরও জাহাজে হামলা করবে কি না। প্রতিবেদনে বলা হয়, হুতিরা দাবি করে, তারা ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ইসরায়েলের বন্দরে নোঙর করা জাহাজও তাদের লক্ষ্যবস্তু। এসব জাহাজে তারা ভবিষ্যতেও হামলা করবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে তারা এমন অনেক জাহাজে হামলা করেছে, যেগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই।  সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, হুতিদের হামলার সময় কোনো জাহাজকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। ২০২৩ সালে এ বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে ‘প্রোসপারিটি গার্ডিয়ান’ নামে একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠন করা হয়েছিল। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র হুতিদের আক্রমণ ঠেকাতে পাল্টা হামলা শুরু করে। তবে সর্বশেষ ঘটনায় দেখা যায়, মার্কিন নৌবাহিনীর (সেন্টকম) আওতাধীন জলসীমায় হুতিরা আক্রমণ করলেও কোনো সহায়তা আসেনি। ব্রিটিশ, ফরাসি কিংবা চীনা নৌবাহিনীর অবস্থানও এই এলাকায় রয়েছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত ৭ জুলাই হুতি বিদ্রোহীরা জাহাজ ম্যাজিক সি-তে হামলা করে। হামলার পরও জাহাজটির ২২ জন ক্রু সদস্য প্রাণে বেঁচে যান। জাহাজটি ছোট ছিল। দ্রুতগামী জাহাজের একটি বহরে তারা কামিকাজি ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। পরে ইটার্নিটি সি নামে আরেকটি জাহাজে হামলা করে তারা। দুটি জাহাজই ডুবে যায়। হামলায় ইটার্নিটি সি জাহাজের বেশ কয়েকজন ক্রু নিহত ও নিখোঁজ হন। জাহাজটিতে ২৫ জন আরোহী ছিলেন। ১০ জন ক্রুকে অন্য জাহাজ এসে উদ্ধার করে। অন্যদের হুতিরা অপহরণ করে। ওই দুই জাহাজে হামলা হয়েছিল ইয়েমেনের উপকূল থেকে প্রায় ৫১ নটিক্যাল মাইল দূরে লোহিত সাগরের মাঝখানে আন্তর্জাতিক জলসীমায়। হুতিরা স্পষ্টতই এই দূরপাল্লার আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। তাদের ছোট আক্রমণকারী জাহাজ দ্রুত ছুটে আসে এবং জাহাজগুলোতে হামলা করে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কয়েক ঘণ্টার জলপথ পাড়ি দিয়ে তারা হামলার মিশন সম্পন্ন করে। ড্রোন হামলা করতে আরও সময় নিতে হয় তাদের। নিখুঁত পরিকল্পনা ছাড়া এই হামলা সম্ভব না।   

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক বর্ণনায় জানায়, ওই দুই জাহাজে হামলার সময় হুতিরা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছিল। তবে তাদের বিপরীতে কোনো জাহাজ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। জানা যায়, হুতিরা তাদের জাহাজে পতাকা উড়িয়ে দ্রুতগতিতে টার্গেট করা জাহাজে হামলা চালিয়েছিল। দূর থেকে এসে চলমান বড় জাহাজে হামলা করা মূলত দুঃসাধ্য কাজ। প্রথমে ড্রোন দিয়ে হামলা করা, তারপর জাহাজটিতে চড়ে বড় সহজ কাজ নয়। হামলাটি অন্তত দুদিন সময় নিয়ে ঘটানো হয়েছিল। সাধারণত মার্কিন নৌবাহিনীর হাতে কয়েকটি ডেস্ট্রয়ার জাহাজ, ক্রুজার এসকর্ট জাহাজ ও অন্যান্য জাহাজ রয়েছে। আরব সাগর বা ভারত মহাসাগরে এগুলোর অবস্থান করার কথা। কিন্তু তাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলে না। ইয়েমেনে এক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের একটি পক্ষ হুতি, যারা আনসারুল্লাহ নামেও পরিচিত। ১৯৯০ এর দশকে তাদের উত্থান।

তাদের নেতা হুসেইন আল-হুতি শিয়া ইসলামের জাইদি ধারার অনুসরণে ধর্মীয় পুনর্জাগরণমূলক আন্দোলন শুরু করেন। হুতিদের পৃষ্ঠপোষকতায় আছে ইরান। ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ তীব্র হওয়ায় এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের জেরে হুতিদের সহায়তা বাড়িয়ে দেয় ইরান। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ২০২১ সালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সমুদ্র মাইন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ও কারিগরি সুবিধা দিয়ে হুতিদের সহায়তা করে ইরান।