ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমির মাজদাল শামস শহর। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও দ্রুজ গোষ্ঠীর মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে তখন ইসরায়েলি সেনাদের সম্পৃক্ত হওয়ার খবরে উচ্ছ্বসিত গোষ্ঠীটির তরুণ সমর্থকরা। সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি দেখে কেউ হাত নেড়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, কেউ আবার ওড়াচ্ছেন দ্রুজের পতাকা। সরকারি বাহিনী, বেদুইন মিলিশিয়া এবং স্থানীয় দ্রুজ যোদ্ধাদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ভয়াবহ দক্ষিণ সিরিয়ার পরিস্থিতি। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ২০৩ জনের প্রাণ গেছে। নিহতদের মধ্যে ৯৩ জনই সরকারি বাহিনীর। বাকিরা বেদুইন এবং দ্রুজ সম্প্রদায়ের। যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করে এখনো থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে সুয়েইদার বিভিন্ন স্থানে। ক্ষতিগ্রস্ত শহরটির গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আটকা পড়া সেনাসদস্যদের উদ্ধারে হামা এবং হোমস প্রদেশ থেকে আরও সেনাবহর পাঠাচ্ছে প্রশাসন। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক এলাকা। অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে সিরিয়া প্রশাসন। অথচ, সংঘাতকবলিত এলাকাতেই হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষায় এই অভিযান বলে জানিয়েছে তেল আবিব। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর- সুয়েইদা দ্রুজ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় আবাস। বরাবরই তাদের সুরক্ষায় নেতানিয়াহু প্রশাসন সোচ্চার। সিরীয় বাহিনীর সঙ্গে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সহিংস উত্তেজনার মধ্যেই টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, অস্ত্র বিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরও ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় সরকারি বাহিনীর ওপর চড়াও হচ্ছে দ্রুজ যোদ্ধারা। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বেসামরিক অঞ্চলটি থেকে সিরীয় বাহিনীকে অপসারণ ও দ্রুজ গোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থেই সুয়েদায় হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। আইডিএফ প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, সিরীয় সরকারের যোদ্ধাদের ট্যাংক ও সামরিক যান লক্ষ্য করে এসব হামলা করা হচ্ছে যেন বেসামরিক এ অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনীকে হটানো যায়। এর আগে, সিরীয় বাহিনীর ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সংখ্যালঘু দ্রুজ গোষ্ঠীর নিরাপত্তার স্বার্থে এ হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘হ্যাঁ! আমরা সিরিয়ায়ও অভিযান শুরু করেছি। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা ইসরায়েল সীমান্তবর্তী এবং তা বেসামরিক একটি অঞ্চল। আমরা এমন পরিস্থিতি মেনে নেব না, যেখানে সিরিয়া আরেকটি লেবাননে পরিণত হবে। সংখ্যালঘু দ্রুজ গোষ্ঠীর সমর্থক ও কর্মীদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।’ কয়েক দিন ধরে দ্রুজ অধ্যুষিত সুয়েদা শহরে বেদুইন যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘাত চলছে দ্রুজ বাহিনীর। দুপক্ষের এই সংঘাত ঠেকাতে মঙ্গলবার সেখানে প্রবেশ করে সিরীয় সরকারের সশস্ত্র যোদ্ধারা। মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে এক প্রকার উচ্ছ্বাসই প্রকাশ করতে দেখা যায় সরকারি বাহিনীকে। সিরীয় সেনাদের সমরাস্ত্রের বহর দেখে নড়েচড়ে বসে ইসরাইল। দ্রুজ গোষ্ঠীটির পাশে দাঁড়াতে সিরীয় যোদ্ধাদের বহর লক্ষ্য করে সোমবার থেকে হামলা শুরু করে নেতানিয়াহু যোদ্ধারা। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত দেশটির সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গতকাল লাইভ প্রতিবেদনে আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা দামেস্কে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের প্রবেশপথে বোমা হামলা চালিয়েছে। রাজধানীতে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরপরই ইসরায়েলি বাহিনীর এই বিবৃতি আসে। ইসরায়েলি বাহিনী পৃথকভাবে জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার দক্ষিণে ড্রুজ-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর সুওয়াইদায় আক্রমণ করছে।এর আগে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, শহরটিকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো হামলা চালিয়েছে, যার ফলে বেসামরিক লোক হতাহত হয়েছে।আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও আজ সুয়ায়দায় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি এই হামলার ঘটনা ঘটল।
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সুবায়দা প্রদেশে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটিতে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষের কারণে সেখানে সরকারি বাহিনী মোতায়েন শুরু হওয়ার পর হতাহতের এই হালনাগাদ সংখ্যা বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার একটি যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুসারে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে ৯২ জন দ্রুজ সংখ্যালঘু সদস্য, এদের মধ্যে ২১ জন বেসামরিক নাগরিক, ৯৩ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ১৮ জন বেদুইন রয়েছে।