সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্রুজ অধ্যুষিত সুয়েইদা প্রদেশে ফের দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে চলা প্রাণঘাতী সহিংসতার মাঝেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারেনি ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন সিরীয় প্রশাসন। রয়টার্স জানিয়েছে, সুয়েইদা শহরে বন্দুকযুদ্ধের আওয়াজ শোনা গেছে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মর্টারের গোলা আছড়ে পড়েছে। তবে এখনো নির্দিষ্ট করে কতজন হতাহত হয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
সরকার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলে শান্তি রক্ষায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং সব পক্ষকে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার আরও দাবি করেছে, এখন পর্যন্ত বহু প্রাণহানি ঘটেছে। গত শনিবার রাতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সুয়েইদা শহরে লড়াই বন্ধ হয়েছে এবং বেদুইন যোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা সত্ত্বেও দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিসংতা অব্যাহত আছে।
রোববার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহ থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা প্রদেশে সংখ্যালঘু দ্রুজ সম্প্রদায় সশস্ত্র বেদুইনদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
শনিবার (১ জুলাই) দ্রুজ যোদ্ধারা সুয়েইদা শহর থেকে বেদুইন অস্ত্রধারীদের তাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে, তবে প্রদেশের অন্যান্য অংশে লড়াই অব্যাহত আছে। দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা সৈন্য মোতায়েন করেছেন, কিন্তু সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুজদের ওপর হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৯ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে সিরিয়ায় ‘নিরপরাধ মানুষকে ধর্ষণ ও হত্যা’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। রুবিও লিখেছেন, ‘যদি দামেস্কের কর্তৃপক্ষ আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট) ও ইরানের নিয়ন্ত্রণমুক্ত একটি ঐক্যবদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ সিরিয়া অর্জনের যেকোনো সুযোগ সংরক্ষণ করতে চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই সরকারি বাহিনী ব্যবহার করে আইএসআইএস ও অন্যান্য সহিংস জিহাদিদের এলাকায় প্রবেশ ও গণহত্যা চালানো থেকে বিরত রাখতে এই সংঘাত বন্ধ করতে সাহায্য করতে হবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সিরিয়া সরকারকে অবশ্যই তাদের সামরিক ব্যক্তিদের পাশাপাশি নৃশংসতার জন্য দোষী সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ শনিবার সন্ধ্যায় সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সুওয়েইদা শহরে সরকারি বাহিনীর হস্তক্ষেপের পর সংঘর্ষ বন্ধ করা হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সুওয়েইদা প্রদেশের অন্যান্য অংশেও লড়াই অব্যাহত আছে। সুইদার একটি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ওমর ওবেইদ জানান, বোমা হামলার শিকার রোগীতে হাসপাতাল ভরে গেছে।
শনিবার রাতে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি বাহিনী সুইদায় মোতায়েনের পর বেদুইন যোদ্ধাদের হটিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা দিনভর সুয়েইদা শহর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে মর্টার শেল পড়তে দেখেছেন। সিরিয়ার দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সুয়েইদা শহরে শনিবার ফের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হলেও মেশিনগানের গুলির শব্দ ও মর্টার শেল বিস্ফোরণে শহরটি কেঁপে ওঠে।
এর ফলে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরও উত্তপ্ত। ব্রিটেনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে সুয়েইদার আশপাশের এলাকায় সংঘর্ষে অন্তত ৯৪০ জন নিহত হয়েছেন। খবর রয়টার্স। সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘আরব এবং আমেরিকার মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।’ পাশাপাশি তিনি ইসরায়েলের একাধিক বিমান হামলার সমালোচনাও করেন। সিরিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা দ্রুজপ্রধান শহর সুয়েইদা থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের সরিয়ে দিয়েছে। সেখানে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে সিরীয় সরকার দেশটির অশান্ত দক্ষিণাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করে। গত শনিবার এ ঘোষণা আসে সিরীয় প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নির্দেশের পর। তিনি দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি আলাদা চুক্তি হয়।
এ চুক্তির উদ্দেশ্য সংঘর্ষে ইসরায়েলের সামরিক হস্তক্ষেপ এড়ানো। সরকারি ঘোষণার ঠিক আগে সুয়েইদা শহরে মেশিনগানের গুলির শব্দ ও আশপাশের গ্রামগুলোতে মর্টার শেল ছোড়ার খবর পাওয়া যায়। তবে এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুর আল-দিন বাবা এক বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা এবং সুয়েইদা প্রদেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী মোতায়েনের পর সংঘর্ষের অবসান ঘটেছে।
আপনার মতামত লিখুন :