ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চল দখলের দ্বারপ্রান্তে আরাকান আর্মি, উদ্বেগে ভারত-চীন

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৮ এএম
আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের কৌশলগত পশ্চিমাঞ্চলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। অঞ্চলটির কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে উদ্বিগ্ন ভারত ও চীন। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের পাশাপাশি আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও বদলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে জান্তা বাহিনীর গৃহযুদ্ধ চলছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে জান্তার সেনারা। বর্তমানে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়ছে সশস্ত্র বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিশেষ করে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য রাখাইন দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এরই মধ্যে রাখাইনের ১৭টির মধ্যে ১৪টি শহর দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। বাকি ৩টি এলাকায় চীন ও ভারতের বড় অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ভারতের কালাদান বন্দর প্রকল্পের জন্য রাজধানী সিত্তে এবং চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের জন্য কিয়াউকফিউর গভীর সমুদ্রবন্দর গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিংয়ের একাধিক বড় প্রকল্পও রয়েছে সেখানে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামীতে রাখাইন রাজ্যের বাকি এলাকাগুলো দখলে নিতে পারে আরাকান আর্মি। তবে রাজ্যটিতে ক্ষমতার পালাবদল হলে পরিবহন ও বাণিজ্য পথগুলো ব্যবহারের জন্য চীন ও ভারতের ওপর কর আরোপ করতে পারে আরাকান আর্মি। এর মাধ্যমে সশস্ত্রগোষ্ঠীটি অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠবে।

তবে আরাকান আর্মি রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিলে সেখানে মানবিক সংকট আরও তীব্র হবে। চলমান গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ওপর মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে। তার ওপর জান্তার সেনারা রাজ্যটিতে খাদ্যসামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ রাখায় অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা। মিয়ানমারে এখন একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা দখল করা জান্তার অনুগত বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মিলিশিয়া ও সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ভারতে রোহিঙ্গাদের একটি বড়সংখ্যক জনগোষ্ঠী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে বাংলাদেশে। সেখানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারে শুরু হওয়া নিষ্ঠুর সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারে বহু প্রজন্ম ধরে বসবাস করা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি নেই।

ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০। তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করছে, প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি। গত ৬ মে দিল্লির বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী ও ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী কার্ডধারী ৪০ জন রোহিঙ্গাকে স্থানীয় থানা থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা পর একটি আটক শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। বিবিসিকে তাঁরা এ তথ্য জানান।