ঢাকা সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

এসসিও সম্মেলন শুরু

তিয়ানজিনে ‘ড্রাগন-হাতি’র করমর্দন

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম
ড্রাগন-হাতি

এবার বিশ্ববাসী দেখবে ‘ড্রাগন-হাতি’র খেলা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রবিমুখ হয়ে চীনের আতিথ্য নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। লাল গালিচা বিছিয়ে তাদের বরণ করে নিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।  বিশ্বমঞ্চে একসঙ্গে নাচবে ‘ড্রাগন-হাতি’Ñ এমনই বার্তা দিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন উপলক্ষে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। রোববার ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে দৈনিক সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে চীনের নেতা পরিবর্তিত বিশ্বের কথা বলেছেন। চীন ও ভারতকে দুই প্রাচীন সভ্যতার দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন শি। বলেন, তারা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশও। এই দেশ দুইটি গ্লোবাল সাউথের অংশ। তার মতে, এই দেশ দুইটির ‘বন্ধু হওয়া প্রয়োজন। ভালো প্রতিবেশী হওয়া দরকার।’ ‘ড্রাগন ও হাতির’ এক মঞ্চে আসা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রায় ৭ বছর পর চীনে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপলক্ষÑ তিয়ানজিং শহরে ১০ জাতি সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সম্মেলন। ঘটনাচক্রে, চীন-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী বা হীরক জয়ন্তী পড়েছে চলতি বছর। শি জিনপিং আশা করছেন, এই দুই বৃহৎ জাতির সম্পর্ককে কৌশলগত ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।’ একটি বহুমেরু বিশ্বের জন্য ও বিশ্বমঞ্চে বহুত্ববাদকে তুলে ধরতে আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয় গণতান্ত্রিক চর্চা রাখতে হবে। এশিয়া তথা সারা বিশ্বে শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।’ চীন-ভারত সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশের ২৮০ কোটি মানুষের মঙ্গলের কথাও বলেছেন শি। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বলেছেনÑ ভারতও পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। মোদির ভাষ্য, ‘আমাদের সহযোগিতা দুই দেশের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। এটি সবার মঙ্গলের দিকে নিয়ে যাবে।’ তবে চীনকে নিয়ে মোদির এমন আশাবাদ তার নিজ দেশে সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস চীন নিয়ে নরেন্দ্র মোদির অবস্থানের সমালোচনা করে বলেছে, এই ‘নতুন বাস্তবতা’ চীনের দাদাগিরিকে প্রতিষ্ঠিত করছে। এর মাধ্যমে মোদি সরকারের মেরুদ-হীনতাই প্রকাশ পাচ্ছে।

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চীনের তিয়ানজিনে দুদিনের শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সামিটের সাইডলাইনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। বৈঠকে মোদি বলেন, ‘গত বছর কাজানে আমাদের খুব ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল, যা আমাদের সম্পর্ককে ইতিবাচক দিকনির্দেশনা দিয়েছে। সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ এর আগে গত অক্টোবরে রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস সম্মেলনে মোদি ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু হওয়া এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ আমাদের সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত। এটি সমগ্র মানবতার কল্যাণের পথও প্রশস্ত করবে।’

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘ভারত এবং চীনের জন্য বন্ধু এবং ভালো প্রতিবেশী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। চীন এবং ভারত দুটিই প্রাচীন সভ্যতার দেশ। আমরা বিশ্বের দুইটি সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের অংশ। তাই বন্ধু হওয়া, ভালো প্রতিবেশী হওয়া এবং এক হয়ে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।’

রাশিয়া ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং কৌশলগত সমন্বয় আগের চেয়ে অনেক গভীর হয়েছে। চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের পর থেকে রাশিয়া ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার এখন চীন, আর রাশিয়া গত বছর চীনের পঞ্চম বৃহত্তম বৈদেশিক অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাণিজ্য মূলত ডলারে হলেও বর্তমানে দুই দেশ প্রধানত নিজেদের জাতীয় মুদ্রায় লেনদেন করছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আমন্ত্রণে রোববার প্রেসিডেন্ট পুতিন চার দিনের সফরে চীন পৌঁছেছেন। সফরের প্রথম অংশে তার তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও জাপানের সামরিক পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এসসিওর এবারের সম্মেলনে ১৬টি সদস্য দেশ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যবেক্ষক দেশ থেকেও প্রতিনিধিদল আসার কথা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতার ও কুয়েত, সেই সঙ্গে রয়েছে ন্যাটো সদস্য তুরস্কও।বেইজিং কয়েকটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নেতাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত হয়েছেন এই সম্মেলনে। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তিয়ানজিন শহর ছেয়ে গেছে ইংরেজি, রুশ ও চীনা ভাষার ব্যানারে। এবারের সম্মেলনস্থলটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকতাকে গুরুত্ব দিয়েছে চীন। এই বন্দরনগরী ১৯ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তি চালু করেছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান তা দখলও করেছিল। এই সম্মেলন শেষে বেইজিংয়ে সামরিক প্যারেডে পুতিন, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ বিভিন্ন নেতার থাকার কথা রয়েছে। এসসিওর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে চীন, রাশিয়া, ভারত ছাড়াও রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, বেলারুশ, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। বিশ্বের জ্বালানি তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ যাদের, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ এই দেশগুলোরই।