ঢাকা বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অনিন্দ্য সুন্দরের নিচেই ভয়ংকর ভূমিকম্প

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
ভূমিকম্প

অনিন্দ্য সুন্দর হিন্দুকুশ হিমালয়ের একটি উপ-পর্বতমালা। এর পাদদেশেই অবস্থিত প্রতিবেশী দুই দেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কিছু এলাকা। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের গ্রামীণ জনপদ থেকে দূরের এ পর্বতমালা দেখায় অনিন্দ্য সুন্দর। চূড়ায় জমে থাকা বরফ, নেমে আসা নদী ও সবুজ দিগন্ত আকৃষ্ট করার মতো। ভূ-উপরিভাগে এমন মনোরম দৃশ্য হলেও ভূ-অভ্যন্তরের কাঠামো বেশ জটিল। টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে একাধিক ফাটল বা ফল্ট লাইন। আফগানিস্তান এ ফল্ট লাইনের ওপরেই অবস্থিত।

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলটিতে কয়েকদিন আগেও আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনপদ। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে শনিবারের মধ্যে নানগারহার ও কুনার প্রদেশে বন্যা দেখা দেয়। এতে প্রাণ হারান অন্তত পাঁচজন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) গত রোববার জানায়, বন্যায় অন্তত ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ভূমিধসের পাশাপাশি অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তপথে যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। যে এলাকায় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে সেটি হিন্দুকশ পর্বতমালা অঞ্চলে। গত রোববার মধ্যরাতে আফগানিস্তানে অনুভূত হওয়া ভূকম্পের মাত্রা ছিল ৬। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ৫ দশমিক ৩ থেকে ৬ দশমিক ২ পর্যন্ত মাত্রাকে মাঝারি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৬ দশমিক ৩ এ পৌঁছালে সেটিকে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলা হয়। তাই প্রশ্ন উঠছে আফগানিস্তানে আঘাত হানা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি এত বেশি কেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি। ধসে গেছে অনেক বসতবাড়ি ও স্থাপনা। এগুলোর নিচে চাপা পড়েছেন অনেকে। ধারণা করা হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ইউএসজিএসের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ভূকম্পনের উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তানের জালালাবাদ শহরের পূর্ব-উত্তরপূর্বের ৪২ কিলোমিটার দূরে। কেন্দ্রস্থলের গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম, মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। একাধিক গণমাধ্যম এ গভীরতা ৮ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে। জালালাবাদ দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানগারহার প্রদেশের পঞ্চম বৃহত্তম শহর।

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পকবলিত প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকাগুলোয় জরুরি উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কর্মকর্তারা। কুনার ও নানগারহার প্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, তারা গত রোববার  রাতে অনেক পরাঘাত অনুভব করেছেন। নানগারহার প্রদেশের বাসিন্দা পোলাদ নুরি নামে ২৮ বছরের একজন বলেন, তিনি ১৩টি পরাঘাত অনুভব করতে পেরেছেন। এ কারণে মধ্যরাতে তিনি ঘর ছেড়ে সড়কে বেরিয়ে এসেছিলেন। তার মতো কয়েকশ মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। পোলাদ নুরি বলেন, ‘এমন শক্তিশালী ভূমিকম্প আমি আমার জীবনে আগে দেখিনি।’ কুনার প্রদেশের পুলিশপ্রধান বিবিসিকে বলেন, ভূমিকম্পের পরাঘাত ও বন্যার জেরে আক্রান্ত এলাকাগুলোর অনেক জায়গায় ভূমিধস হয়েছে। এতে চলাচলের সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে শুধু আকাশপথে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

ভূতাত্ত্বিক মতবাদ অনুসারে, পৃথিবীর ভূত্বক প্রধানত সাতটি বড় ও কয়েকটি ক্ষুদ্র গতিশীল কঠিন প্লেট দ্বারা গঠিত। যেগুলো ভ্রাম্যমাণ উষ্ণ গুরুমন্ডলীয় পদার্থের ওপর ভাসছে। প্লেটগুলোর নড়াচড়ায় ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পর্বত সৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটে। যেমন, ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি। এই প্লেটগুলোর সংযোগস্থলে বা মাঝখানে চাপ তৈরি হলে কঠিন শিলা ফেটে যায়। যেটিকে বলা হয় ‘ফল্ট লাইন’। আফগানিস্তানে ভারতীয় ও ইউরেশিয়ান টেকটনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে। আর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা ও ভূঅভ্যন্তরের একাধিক ফল্ট লাইন। আফগানিস্তানের কিছু এলাকা এই ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত। ফলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়।

তালেবান কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সম্পদ সীমিত। তাই উদ্ধারকাজে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার। বিশেষ করে ভূমিকম্পকবলিত এলাকাগুলোয় পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টার প্রয়োজন।কুনার প্রদেশের দুটি সূত্র জানায়, স্থানীয় মাজার উপত্যকায়  সোমবার ভোরে অন্তত চারটি হেলিকপ্টার চিকিৎসাকর্মীদের নিয়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় দেশটিতে গত দুই দশকের মধ্যে অন্যতম বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে ২০২২ সালে। পূর্বাঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ১ হাজার বাসিন্দা। আহতের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার। এই ভূমিকম্পটিও মাটির মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীর উৎপত্তি হয়েছিল।