ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফিলিস্তিনিরা গন্তব্যহীন

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ১১:৫৫ পিএম

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসির একটি এলাকাকে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করেছে ইসরায়েল। যেটি এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুতদের দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এতে নতুন করে আর কেউ সেখানে আশ্রয় নিতে পারছে না। এমন অবস্থায়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ই ফিরে আসছে ফিলিস্তিনিরা। যেখানে অনবরত হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ।

নিরাপদ আশ্রয় পেতে ব্যর্থ হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ই ফিরে আসছে ফিলিস্তিনিরা। যেখানে অনবরত হামলা চালাচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)। এদিকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গাজা সিটি ছাড়লেও গন্তব্য জানা নেই আরেকদল ফিলিস্তিনির। রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে অনেকে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, গাজা সিটি দখলের অংশ হিসেবে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সেখানকার বাসিন্দাদের অঞ্চলটি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। যেখানে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি দুদিন ধরে রোদে অবস্থান করছিলাম এবং কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এখন জিনিসপত্র নিয়ে আবারও গাজা শহরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করলেও মাওয়াসিতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তায় ইসরায়েল কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

এদিকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গাজা সিটি ছাড়লেও গন্তব্য জানা নেই আরেক দল ফিলিস্তিনির। বারবার বাস্তুচ্যুত হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তারা। তাদের মধ্যে এক ফিলিস্তিনির ভাষ্য, ‘আমি জানি না ঠিক কোথায় যাচ্ছি। গত রাতে পরিবার নিয়ে রাস্তায় ঘুমিয়েছি। আমরা জানি না এর সমাধান কী? এর চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।’

ইসরায়েলি হামলায় যানবাহন ধ্বংস এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। জ্বালানির অভাবে অল্প দূরত্বের ভ্রমণও হয়ে পড়েছে ব্যয়বহুল।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা বিমান ও স্থল হামলায় গাজা সিটির বহুতল ভবনগুলো একের পর এক ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে অন্তত ৫০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মধ্যেই এসব ধ্বংসযজ্ঞ চলছে।

গাজার আশপাশের শহরগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যে জায়তুন শহরের প্রায় পুরোটাই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। আগস্টের শুরু থেকে এখানে ১৫০০টির বেশি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। এখানে বেশির ভাগ অংশেই আর কোনো ভবন অবশিষ্ট নেই।

আলজাজিরার রিপোর্টার হানি মাহমুদ গাজা সিটি থেকে জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে আশ্রয়ের জায়গা না পেয়ে অনেকে আবার ফিরে আসছেন।

দক্ষিণমুখী দুইটি প্রধান সড়কই কার্যত বন্ধÑসালাহ আল-দিন রোড স্নাইপারদের দখলে, আর উপকূলীয় আল-রশিদ রোডে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাঁবু বসায় যান চলাচল অচল। এমনকি ইসরায়েলের ঘোষিত ‘মানবিক অঞ্চল’ আল-মাওয়াসিতেও নিরাপত্তা নেই।

সেপ্টেম্বর মাসের স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায় ইসরায়েলি হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চলের বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অনেক হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনড় রয়েছে। তবে ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হামাস। খবর রয়টার্সের। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়।

প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখ-ে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে এ হামালায় এক দিনে আরও অন্তত ৬৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটি ও উত্তর গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। দেশটির চিকিৎসা সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়,  সকাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ১৬টি আবাসিক ভবন এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের আশ্রয় দেওয়া একটি স্কুল ধ্বংস করেছে। এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে অঙ্গীকার করেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছু থাকবে না।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নেতাদের মিসরে হত্যার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল।  মিসরীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এই গোয়েন্দা তথ্য জানতে পেরেছেন। সেই সঙ্গে তারা ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছেন, এমন কোনো হামলা হলে মিসর কঠোর জবাব দেবে। জ্যেষ্ঠ মিসরীয় কর্মকর্তাদের বরাতে এ খবর দিয়েছে লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই।