সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আপাতত স্থগিত করেছে আফগানিস্তান। গত রোববার তালেবান সরকার জানায়, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে পাকিস্তানি তালেবানের উপস্থিতি ও সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাবুল। আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি রোববার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পাকিস্তানে কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। আফগানিস্তান সীমান্ত ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পাকিস্তানের আগ্রাসনের আমরা তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়েছি। আমরা আমাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছি। আমাদের বন্ধু কাতার ও সৌদি আরব বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়েছে।
তাই আপাতত আমাদের অভিযান স্থগিত রাখা হয়েছে।’ আঞ্চলিক মধ্যস্থতাসহ কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধের পর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ থামার লক্ষণও দেখা গেছে। কাবুলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আফগান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, কাতার ও সৌদি আরবের অনুরোধে শত্রুতার অবসান ঘটেছে। তবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কোনো পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তান যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানাবে। একই সময়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশ কাবুল ও ইসলামাবাদকে সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় পক্ষকে কূটনীতি, সংলাপ ও সংযমকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে।
ইরানও অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাতে অন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষকে অবিলম্বে উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সীমান্তে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও বেসামরিক জনজীবনের প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংঘাতে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৩ অক্টোবর) তিনি বলেছেন, ‘আমি শান্তি স্থাপনে পারদর্শী।’ গত শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, কাবুলের হামলার জবাবে ইসলামাবাদ পাল্টা ব্যবস্থা নিলে ২৩ পাকিস্তানি সেনা এবং দুই শতাধিক তালেবান ও সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা নিহত হন। চার দিনব্যাপী সংঘাতে দুই পক্ষই যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, গোলন্দাজ অস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে। এতে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। পাকিস্তান দাবি করে, সংঘাতের সময় তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফরাসি তৈরি রাফালও ছিল। তবে ভারত ‘কিছু ক্ষতি’ কথা স্বীকার করলেও ছয়টি যুদ্ধবিমান হারানোর কথা অস্বীকার করে।