ইরানে দেখা দিয়েছে শতাব্দীর ভয়াবহতম খরা। তেহরানে শীতকালে সাধারণত তুষারপাত হয়। তবে এ বছর তা নেই, পর্বতচূড়াগুলো শুকনো হয়ে গেছে। অন্য বছর দেশের অর্ধেক প্রদেশে কিছু না কিছু বৃষ্টি হয়। তবে এ বছর কয়েক মাস অনেক প্রদেশে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, চলতি বছরে রাজধানীতে শতাব্দীর সর্বনি¤œ বৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্দশা কাটাতে তারা সৃষ্টিকর্তার কাছে বিশেষ প্রার্থনা করেছেন। শুক্রবার তেহরানের উত্তর অংশের ইমামজাদেহ সালেহ মসজিদে শত শত মানুষ বৃষ্টির জন্য বিশেষ প্রার্থনায় মিলিত হন। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান সতর্ক করেছিলেন, শীতের আগেই বৃষ্টি না হলে তেহরানকে স্থানান্তর করতে হতে পারে। যদিও তিনি বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা প্রকাশ করেননি। পেজেশকিয়ান বলেন, পানির ব্যবহার সীমিত করার পরেও যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে পানি একেবারেই শেষ হয়ে যাবে।
ইরান বৃষ্টিপাত ঘটাতে মেঘবীজ (ক্লাউড সিডিং) বপন কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশটিতে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা চলছে। ইরান কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ কথা জানিয়েছে। সরকারি আইআরএনএ সংবাদ সংস্থা শনিবার রাতে জানিয়েছে, ‘প্রথমবারের মতো উর্মিয়া হ্রদ অববাহিকায় আজ একটি মেঘবীজ বপন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। মেঘবীজ বা ক্লাউড সিডিং হলো একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানুষের উদ্যোগে মেঘে কিছু বিশেষ পদার্থ (বীজ) ছোড়া হয়, যাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ানো যায়। এটি মূলত কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঘটানোর চেষ্টা। উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত উর্মিয়া ইরানের বৃহত্তম হ্রদ। কিন্তু খরার কারণে এটি মূলত শুকিয়ে গেছে এবং একটি বিশাল লবণাক্ত স্তরে পরিণত হয়েছে। আইআরএনএ আরও জানিয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশে আরও মেঘবীজ কার্যক্রম চালানো হবে। বিমান থেকে মেঘে সিলভার আয়োডাইড এবং লবণের মতো কণা স্প্রে করা হয়, যাতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গত বছর ইরান ঘোষণা করেছিল যে তারা এই প্রক্রিয়ার জন্য নিজস্ব প্রযুক্তি তৈরি করেছে। শনিবার আইআরএনএ জানিয়েছে, পশ্চিমে ইলাম, কেরমানশাহ, কুর্দিস্তান ও লোরেস্তানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশটির আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি গড়ের তুলনায় চলতি বছর বৃষ্টিপাত প্রায় ৮৯ শতাংশ কম হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বর্তমানে ৫০ বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে শুষ্ক শরৎকাল অনুভব করছি।’ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আলবোর্জ পর্বতমালার তেহরান অঞ্চলে অবস্থিত তোচাল পর্বত ও স্কি রিসোর্টে এ বছর প্রথমবারের মতো তুষারপাতের ফুটেজ দেখা গেছে। মূলত শুষ্ক দেশ ইরান বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী শুষ্কতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, রাজধানী তেহরানে বৃষ্টিপাত এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বনি¤œ স্তরে রয়েছে এবং ইরানের অর্ধেক প্রদেশে কয়েক মাস ধরে এক ফোঁটাও বৃষ্টিও দেখা যায়নি। অনেক প্রদেশে জলাধারের পানির স্তর রেকর্ড সর্বনি¤েœ নেমে এসেছে। এই জলাধারগুলো থেকে পানি সরবরাহ করা হয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান এক মারাত্মক সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শীতের আগেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে তেহরানকে স্থানান্তর করতে হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, পানির ব্যবহার সীমিত করার পরেও যদি বৃষ্টি না হয়, তাহলে পানি সরবরাহ একেবারে শেষ হয়ে যাবে। যদিও পরবর্তীতে সরকার জানায় যে, পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় প্রেসিডেন্ট কেবল বাসিন্দাদের সতর্ক করতে চেয়েছিলেন এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নয়।

