ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের বিচার হওয়ার যত ঘটনা

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০২:৪৯ এএম

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি (বাঁ থেকে), থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ও ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। কোলাজ ষাটের দশকে ঠা-া যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, পূর্ব ইউরোপ তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতের মুঠোয়। তখন এক রাষ্ট্রনেতা রুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, মস্কোর খবরদারি আর চলবে না। কমিউনিস্ট হয়েও, হাটলেন সংস্কারের পথে। দেশের মানুষ ভাবল, এবার বুঝি মুক্তি আসছে। পশ্চিমারাও দারুণ খুশি, নতুন এক হিরো পেয়ে। কিন্তু সেই ‘হিরো’ সবার চমকে দিয়ে বনে যায় ভয়ংকর এক ভিলেন। ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় স্বৈরশাসক। সেই নেতার নাম নিকোলাই চচেস্কু। চচেস্কু ১৯৬৫ সালে ক্ষমতায় আসেন। কয়েক বছরের মধ্যেই ক্ষমতা তাকে পরিবর্তন করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে উত্তর কোরিয়া এবং চীন সফরে গিয়ে কিম ইল সুং ও মাও সেতুংয়ের শাসনধারা দেখে তিনি প্রভাবিত হন।

এরপর রোমানিয়ায়ও একই ধরনের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালু করেন। নিজের এবং স্ত্রী এলেনার পক্ষে ব্যক্তিপূজা শুরু হয়Ñ স্কুলের বই থেকে শুরু করে শহরের বিশাল মূর্তি পর্যন্ত সব জায়গায়। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ‘সিকিউরিটেট’ ছিল তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। জনসংখ্যার প্রতি ৪৩ জনের একজন এজেন্ট বা ইনফর্মার ছিলেন। তারা শুধু ফোন, চিঠি বা কথোপকথনই নজরদারি করত না, পরিবারের সদস্যদের ওপরও নজর রাখত। ডাক্তাররা রোগীদের গোপনে রেকর্ড করতে বাধ্য হন, শিশুরা স্কুলে কী বলছে তা রিপোর্ট করা হতো। এর ফলে দেশজুড়ে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়।

চচেস্কু এবং এলেনাকে বুখারেস্টের এক সামরিক ঘাঁটিতে নেওয়া হয়। সেখানে তড়িঘড়ি সামরিক আদালত বসানো হয়। তিনটি অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে: গণহত্যা, অর্থনীতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র, ও রাষ্ট্রের সম্পদ অপচয়। চচেস্কু-এলেনা বিচারকদের ভর্ৎসনা করে দাবি করেন, সব বিদেশি চক্রান্ত, তারা এখনো রোমানিয়ার বৈধ শাসক। তবে তাতে কেউ কান দেয়নি, কারণ এটা ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, রায় তো আগে থেকেই নির্ধারিত; যার উদ্দেশ্য জনগণের প্রতিশোধের মনোভাবকে প্রশমিত করা। দুই ঘণ্টায় শেষ হয় বিচারকাজ। দুজনকেই মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন সেনা সদস্য সেই রায় কার্যকরও করে ফেলেন। কথা ছিল হত্যার দৃশ্য সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার হবে। কিন্তু উত্তেজনায় ক্যামেরার জন্য অপেক্ষা না করেই গুলি চালিয়ে দেয় সেনারা। দুজনের শরীরে ১২০টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। তাদের গুলিবিদ্ধ লাশের দৃশ্য ফলাও করে প্রচার হয় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে।

ক্ষমতা হারানোর পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা আছে। গত মাসেই কারাভোগ করেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তালিকায় আরও আছেন, থাইল্যান্ডের ইংলাক সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার নাজিব রাজাক, ইসরায়েলের এহুদ ওলমার্ট। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ সেপ্টেম্বর নিকোলাস সারকোজিকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন দেশটির আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে একটি চুক্তির মাধ্যমে লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছে থেকে অর্থ নেওয়ার আভিযোগ আছে। এ মামলায় গত ২১ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয় সারকোজিকে। কিছুদিন পরই তিনি জামিন পান।

২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সারকোজি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। বিবিসির তথ্য, ক্ষমতায় থাকাকালেই চালে ভর্তুকির একটি দুর্নীতি মামলার অভিযোগ আনা হয়েছিল থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে তাঁর সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী। ২০১৭ সালের অগাস্টে তিনি গোপনে দেশ ছাড়েন। পরে তাঁর অনুপস্থিতিতে পাঁচ বছরের জেল দেওয়া হয়। প্রতারণার অভিযোগে দুই বছর ৩ মাসের কারাদ- হয়েছিল ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টের।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে তিনি ছাড়া পান। রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্পর্কে একটি মন্তব্যের জেরে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন ওলমার্ট। নেতানিয়াহু নিজেও বর্তমানে ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের আওতায় আছেন। আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এই মামলায় নেতানি