সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তারা দখলদার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে রাজি আছেন। তবে এর আগে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের স্পষ্ট পথ তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন যুবরাজ। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বিন সালমান বলেন, ‘আমরা আব্রাহাম চুক্তির অংশ হতে চাই। তবে আমরা সেই সঙ্গে নিশ্চিত হতে চাই, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের ব্যাপারে আমরা একটি পরিষ্কার পথ নিশ্চিত করব।’ দখলদারদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ ভালো কথাবার্তা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সালমান বলেন, ‘দ্বিরাষ্ট্র সমস্যার যেন একটি দ্রুত সমাধান পাই, সে জন্য আমরা কাজ করব।’ যুবরাজ উত্তর দেওয়ার সময় পাশ থেকে তখন ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি শব্দটি ব্যবহার করতে চাই না। কিন্তু আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে আমাদের বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা এক রাষ্ট্র, দ্বিরাষ্ট্র নিয়ে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে আমরা আরও আলোচনা করব। আব্রাহাম চুক্তির ব্যাপারে বিন সালমানের অনুভূতি বেশ ভালো।’ ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান প্রত্যাশা করে যুবরাজ বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলিদের জন্য শান্তি চাই। আমরা ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি চাই। আমরা চাই তারা একসঙ্গে এই অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে।’
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মঙ্গলবারের সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সিভিল পারমাণবিক শক্তি এবং আধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউস এ তথ্য জানিয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপির। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘দুই দেশ সিভিল পারমাণবিক শক্তির ওপর একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ অনুমোদন করেছে, যা শক্তিশালী অস্ত্র বিস্তার রোধের মানদ-ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কয়েক দশক ধরে বহু বিলিয়ন ডলারের পারমাণবিক শক্তি অংশীদারত্বের আইনি ভিত্তি তৈরি করে।’ এ ছাড়া, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ‘বড় আকারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয় প্যাকেজ’ অনুমোদন করেছেন, যার মধ্যে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ আধুনিক আমেরিকান যুদ্ধবিমান সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সৌদি আরবকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্মানে নৈশভোজে অতিথিদের সামনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
গত মঙ্গলবার নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর বাইরের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র (নন-ন্যাটো মেজর অ্যালাই) হিসেবে মনোনীত করে আমাদের সামরিক সহযোগিতা আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি, যা তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৯টি দেশকে এ মর্যাদা দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখনই আপনাদের প্রথমবারের মতো এ কথা বলছি। কারণ, তারা চেয়েছিলেন, আজ রাতের জন্য বিষয়টা একটু গোপন রাখা হোক।’
শুধু গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ঘোষণাই নয়; বরং ট্রাম্প চান গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিষদ গঠিত হবে, তাতেও একজন হিসেবে কাজ করবেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী আলোচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা সম্পর্কে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সৌদি যুবরাজকে ওয়াশিংটনে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। একই দিন হোয়াইট হাউসে একান্ত বৈঠক করেন দুই নেতা। এ সময় সাংবাদিকেরা খাসোগি হত্যা সম্পর্কে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রশ্ন করলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “এ ধরনের ঘটনা (অনাকাক্সিক্ষত হত্যাকা-) ঘটতে পারে। তবে খাসোগিকে ‘গ্রেপ্তার বা হত্যা’ পরিকল্পনার সঙ্গে যুবরাজ সালমানের কোনো যোগসাজশ নেই।”

