অনেক অনেক বছর আগে, সাভানার বিশাল প্রান্তরে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামে বাস করত কাকোবা নামে এক সৎ দরিদ্র ছেলে। যখন সে খুব ছোট ছিল, তখন তার বাবা-মা মারা গিয়েছিল। এখন সে একা থাকে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে। কাকোবা প্রতিদিন জঙ্গলে কাঠ কুড়াতে যেত এবং তা বাজারে বিক্রি করত। আয় খুব কম হলেও সে কখনো অভিযোগ করত না। গ্রামের সবাই তাকে ভালোবাসত কারণ সে সবাইকে সাহায্য করত। একদিন কাকোবা জঙ্গলের গভীরে কাঠ কুড়াতে গিয়েছিল। হঠাৎ সে শুনল এক অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ। সে আওয়াজ অনুসরণ করে এগিয়ে গেল এবং দেখল একটি বুড়ো কচ্ছপ উল্টে পড়ে আছে, উঠতে পারছে না। কাকোবা জিজ্ঞেস করল ‘ওহে বুড়ো কচ্ছপ, তুমি কেমন আছো?’। ‘আমি দুই দিন ধরে এভাবে পড়ে আছি, ছেলে। কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম,’ কচ্ছপ দুর্বল গলায় বলল। কাকোবা তৎক্ষণাৎ কচ্ছপকে উল্টে দিল। কচ্ছপ কৃতজ্ঞতায় বলল, ‘তুমি সত্যিই ভালো হৃদয়ের ছেলে। আমি আসলে এই জঙ্গলের রক্ষক আত্মা। তোমার দয়ার বদলা দিতে চাই।’ এই বলে কচ্ছপ তার খোলসের নিচে থেকে একটি ছোট ঢোল বের করল। ঢোলটি ছিল মসৃণ কাঠের তৈরি, তাতে খোদাই করা ছিল বিচিত্র সব নকশা। এই ঢোল জাদুর ঢোল, কচ্ছপ বলল। যখন তুমি সত্যিই বিপদে পড়বে, তখন এটি তিনবার বাজাবে এবং বলবে ‘বাওবাব গাছের আত্মা, আমাকে সাহায্য করো।’ কিন্তু মনে রেখ, এই জাদু মাত্র তিনবার কাজ করবে। তাই বুদ্ধি করে ব্যবহার করিও।
সব শুনে কাকোবা কচ্ছপকে ধন্যবাদ দিয়ে ঢোলটি নিয়ে বাড়ি ফিরল। সে ঢোলটি নিরাপদে লুকিয়ে রাখল। তার জীবন আগের মতোই চলতে লাগল। তবে কিছুদিন পর দেশে ভয়াবহ খরা দেখা দিল। মাসের পর মাস বৃষ্টি হলো না। নদী শুকিয়ে গেল, ফসল মরে গেল, মানুষ আর পশুরা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়ল। তাদের গ্রামের প্রধান ঘোষণা করলেন, যে আমাদের পানি এনে দেবে, তার সঙ্গে আমি আমার মেয়ে আদিয়াকে বিয়ে দেব এবং আমার অর্ধেক সম্পত্তি দান করব। প্রধানের কথা শুনে অনেকেই চেষ্টা করল; কিন্তু কেউ পানি খুঁজে পেল না। গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জুমা এবং তার দুই ছেলে দূর-দূরান্ত খুঁজে এল, কিন্তু তারাও ব্যর্থ হলো। সে মুহূর্তে কাকোবা দেখল শিশুরা তৃষ্ণায় কাঁদছে, বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সে বুঝল এখনই জাদুর ঢোল ব্যবহার করার সময়। সে ঢোলটি বের করল এবং তিনবার বাজাল। ‘বাওবাব গাছের আত্মা, আমাকে সাহায্য করো। আমার গ্রামবাসীদের পানি দাও।’ হঠাৎ মাটি কাঁপতে শুরু করল। গ্রামের মাঝখানে ফাটল দেখা দিল এবং সেখান থেকে স্ফটিক স্বচ্ছ পানির ঝরনা বের হতে লাগল। গ্রামবাসী আনন্দে চিৎকার করে উঠল! গ্রামপ্রধান কাকোবাকে ডাকলেন এবং তার মেয়ে আদিয়ার সঙ্গে বিয়ে দিলেন। কাকোবা এবং আদিয়া খুব সুখী হলো। তারা একসঙ্গে গ্রামের মানুষের সেবা করতে লাগল। কিন্তু এসব দেখে ধনী জুমার মন পুড়ত। সে ভাবত এই দরিদ্র ছেলে কীভাবে পানি পেল? নিশ্চয়ই তার কাছে কোনো জাদুর জিনিস আছে। একদিন জুমা তার দুই ছেলেকে পাঠাল কাকোবার ঘর তল্লাশি করতে। তারা জাদুর ঢোলটি খুঁজে পেল এবং চুরি করে নিয়ে গেল। জুমা আনন্দে নেচে উঠল। সে ভাবল এখন আমি আরও ধনী হব! সে ঢোল বাজাল এবং বলল, ‘আমাকে স্বর্ণের পাহাড় দাও!’ কিন্তু কিছু হলো না। কারণ ঢোল শুধু সৎ এবং নিঃস্বার্থ হৃদয়ের মানুষের জন্য কাজ করে। জুমা রাগে ঢোলটি মাটিতে ছুড়ে ফেলল এবং তা ভেঙে গেল।
কাকোবা যখন জানতে পারল, সে দুঃখিত হলো। কিন্তু রাগান্বিত হলো না। সে বলল, ঢোল চলে গেলেও সেটা আমাকে যা শিখিয়েছে তা আছে। সত্যিকারের জাদু হলো দয়া, সততা এবং অন্যের সেবা করা। গ্রামের লোকজন কাকোবার প্রজ্ঞা দেখে মুগ্ধ হলো। আর জুমা তার লোভের জন্য আজীবন লজ্জিত থাকল।

