ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফাঁকা ৬৩ আসনে কী করবে বিএনপি?

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৫, ০৮:৫৪ এএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই তালিকা ঘোষণা করেন।

তবে এখনো বাকি ৬৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২৩৭ আসনে আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলাম। এরপর যারা আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, সেই দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে এই আসনগুলোতে তারা আসতে পারেন অথবা আমাদের প্রার্থীরাও পরিবর্তন হতে পারে।’

তিনি জানান, বিএনপি আপাতত এই আসনগুলো ফাঁকা রেখেছে শরিক দল ও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদারদের জন্য, যাতে তারা আলোচনার মাধ্যমে এসব আসনে প্রার্থী দিতে পারেন।

বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকাটি এখনো চূড়ান্ত নয়। দলের মহাসচিব এ বিষয়ে বলেন, ‘এখন যেটা আমরা ঘোষণা করলাম, সেটা সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা। আমাদের স্থায়ী কমিটি চাইলে যেকোনো সময় এটা পরিবর্তন করতে পারে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্রুতই বাকি ৬৩ আসনের প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং শরিক দলের সঙ্গে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

প্রার্থী ঘোষণার আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নজরুল ইসলাম খান ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া বিএনপির সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরাও উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর পরে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি আমরা অনেক আগেই শুরু করেছি। সারা দেশে সব ইউনিটে আমরা কাজ শুরু করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলো। আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তারা যেসব আসনে প্রার্থী দিতে চান, সেখানে আমরা প্রার্থী দিইনি। পরে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

এর আগে গত রোববার দলীয় এক কর্মসূচিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথে সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কারণে কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। আমরা নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন।’

বিএনপির ঘোষিত ২৩৭ আসনের বাইরে যে ৬৩টি আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি, সেগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-২, দিনাজপুর-৫, নীলফামারী-১ ও ৩, লালমনিরহাট-২, বগুড়া-২, নওগাঁ-৫, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-১, ঝিনাইদহ-১, ২ ও ৪, যশোর-৫, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-২ ও ৩, বরিশাল-৩, ঝালকাঠি-১, পিরোজপুর-১, টাঙ্গাইল-৫, ময়মনসিংহ-৪ ও ১০, কিশোরগঞ্জ-১ ও ৫, মানিকগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-৭, ৯, ১০, ১৩, ১৭, ১৮ ও ২০, গাজীপুর-১ ও ৬, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-১, মাদারীপুর-২, সুনামগঞ্জ-২ ও ৪, সিলেট-৪ ও ৫, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৬, কুমিল্লা-২ ও ৭, লক্ষ্মীপুর-১ ও ৪, চট্টগ্রাম-৩, ৬, ৯, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং কক্সবাজার-২।

দলের নেতারা জানিয়েছেন, এই আসনগুলোতে শরিক দল ও যুগপৎ আন্দোলনের অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া কিছু আসনে স্থানীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জটিলতা ও সমন্বয় সমস্যা থাকায় আপাতত প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছে।

দীর্ঘদিন পর নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি এবার নতুন উদ্যমে নির্বাচনি প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সারা দেশে সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ শেষ করেছি। এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার মাধ্যমে আমাদের নির্বাচনি যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।’