চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড সিংহরিয়া (মই¹ের কুম্বারপাড়) এলাকায় হালদা নদীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় এই দুই স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয়রা।
বন্যায় ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। পানির তোড়ে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি এবং গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এখনো অনেক পরিবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সম্প্রতি ভারি বর্ষণে আবারও পাহাড়ি ঢলের পানিতে পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের দুই পয়েন্টে নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কোথাও কোথাও বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে করে আশপাশের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর বন্যার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ সরবরাহ করে সাময়িক মেরামতের চেষ্টা করা হলেও তা টেকেনি। প্রবল স্রোতে সেগুলো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থায়ী কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় এবারও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া জিও ব্যাগ বাঁধের গোড়া থেকে সরে গেছে। ফলে নদীর পানির তোড়ে বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এলাকায় বিকল্প সড়ক না থাকায় খালের বাঁধই ছিল স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র পথ। বাঁধ ধসে যাওয়ায় এখন যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের স্কুল, মাদ্রাসা বা কলেজে যাওয়া থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বাজার-সদাই করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পাখি বালা বড়ুয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এই বাঁধ স্থায়ীভাবে ঠিক করতে হবে। দুই বছর ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া জিও ব্যাগ দিয়ে কোনোরকম সংস্কার করলেও তা পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এবার যদি পুরো বাঁধ ভেঙে যায়, সন্তানদের জীবনও রক্ষা করতে পারব না।’
একই আশঙ্কার সুর কৃষক দিদারুল আলমের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন একর জমিতে ধান রোপণ করতে চাচ্ছি। পানি ঢুকে গেলে তো সব শেষ হয়ে যাবে। কৃষকের তো এমনিতেই কষ্ট, তার ওপর যদি এই ক্ষতি হয়, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো লোকমান জানান, ‘গতবার বন্যার বাঁধটি ভেঙে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো পানির স্রোতের টেকেনি। কংক্রিটের ব্লগ দিয়ে স্থায়ী সংস্কার করতে হবে। তা না হলে এলাকাবাসী বিপন্মুক্ত হবে না।’
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফটিকছড়ির প্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার বলেন, ‘গত বছরের বন্যার পর সাময়িকভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এবার তা পানির তোড়ে তলিয়ে গেছে। ঠিকাদারকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি পুনঃসংস্কারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য নতুন করে বাঁধ নির্মাণে বরাদ্দ প্রয়োজন, বরাদ্দ পেলে কংক্রিটের ব্লগ দিয়ে কাজটি টেকসইভাবে করা হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :