বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে শুধু পড়াই নয়, সঠিক পরিকল্পনা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মনোবল খুব গুরুত্বপূর্ণ। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মো. রফিকুজ্জামান জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সহজ কৌশলগুলো
লক্ষ্য ও ইউনিট নির্ধারণ
ভর্তি প্রস্তুতির শুরুতেই আপনার লক্ষ্য স্থির করা অপরিহার্য। লক্ষ্য ঠিক না থাকলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় ও মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। আপনি কোন ইউনিটে (যেমন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিট, ‘খ’ ইউনিট) অথবা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে (অনার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন, টেক্সটাইল ইত্যাদি) ভর্তি দিতে চান, তা স্পষ্ট করুন। বিষয়ভিত্তিক বিষয়ে গুরুত্ব দিন; বিজ্ঞান শিক্ষার্থী : আপনার লক্ষ্য হতে পারে ফিজিক্স-কেমিস্ট্রিতে ভালো দখল রাখা। মানবিক বা বাণিজ্য শিক্ষার্থী : বাংলা, ইংরেজি, জেনারেল জ্ঞান, আইসিটি এবং গণিতে ভালো করা আপনার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
কার্যকরী স্টাডি প্ল্যান
একটি সুচিন্তিত সময়সূচি আপনার প্রস্তুতিকে সুশৃঙ্খল করবে। এর জন্য দরকার একটি কার্যকরী স্টাডি প্ল্যান যেমনÑ সময়সূচি তৈরি; প্রতিদিন, সপ্তাহ ও মাসের ভিত্তিতে পড়াশোনার সময়সূচি তৈরি করুনÑ কোন বিষয় কখন পড়বেন, কখন রিভিশন করবেন, কখন মক-টেস্ট দেবেন। আপনার দুর্বল বিষয়গুলোর জন্য বেশি সময় রাখা জরুরি। পড়ার সঙ্গে পর্যাপ্ত বিরতি ও বিশ্রাম রাখুন। এতে শরীর ও মনের চাপ কম হয় এবং মনোযোগ বাড়ে। মুখস্ত না করে বুঝে পড়াকে গুরুত্ব দিন। যৌক্তিক ও অধ্যায়ভিত্তিক পড়াই সবচেয়ে কার্যকর।
প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি কৌশল
সঠিক কৌশল অবলম্বন করে প্রতিটি বিষয়ের মৌলিক ধারণা স্পষ্ট করুন। যেমনÑ বাংলার ক্ষেত্রে (বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) সাহিত্য অংশে গদ্য-পদ্য, গল্প, উপন্যাস, লেখক-পরিচিতি, সাহিত্যকর্ম ও কবিতার বিষয়বস্তু ভালোভাবে জানুন। ব্যাকরণ অংশে শব্দ, সন্ধি-সমাস, বিভক্তি, উপসর্গ-অনুসর্গ, বাক্য সংকোচন, বাগধারা ইত্যাদি অংশে জোর দিন। আবার ইংরেজিতে গ্রামার অংশ: চধৎঃং ড়ভ ঝঢ়ববপয, অৎঃরপষব, ঞবহংব, ঠড়রপব, ঘধৎৎধঃরড়হ, ঝবহঃবহপব ঈড়ৎৎবপঃরড়হ, ঞৎধহংষধঃরড়হ, ঔড়রহরহম ঝবহঃবহপব, ঈড়সঢ়ৎবযবহংরড়হ এগুলো মৌলিকভাবে অভ্যাস করুন। শব্দভা-ার ও সাহিত্য যেমন ঝুহড়হুসং-অহঃড়হুসং (সমার্থক-বিপরীতার্থক শব্দ) চর্চা করুন। সাহিত্যিকদের জীবন-কর্ম, লেখা ও উদ্ধৃতিতেও মন দিন। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের বিষয়সমূহ যেমনÑ রসায়ন : পদার্থের অবস্থা, রাসায়নিক বন্ধন, সূত্রাবলি, যোজনী-গাঠনিক সংকেত ইত্যাদি। পদার্থবিজ্ঞান : গতির সূত্র, বল, ত্বরণ, ভেক্টর ও স্কেলার, স্থিরবিদ্যুৎ-বিদ্যুৎপ্রবাহ-তাপীয় ক্রিয়া, চৌম্বক, আলোর প্রতিফলন-প্রতিসরণ ইত্যাদি। জীববিজ্ঞান এ উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস, শ্বসন-সালোকসংশ্লেষণ, কোষ, রক্ত ও রেচনতন্ত্র, প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম, প্রজননতন্ত্র ইত্যাদি ভালোভাবে পড়াশোনা করা। হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবসায় নীতি (বাণিজ্য বিভাগের জন্য)। হিসাববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুনাফা-মূলধন, আয়-ব্যয়, সম্পত্তি-দায়-মালিকানা, ক্রয়-বিক্রয়, অনুপাত, শেয়ার ইস্যু ইত্যাদি ও ব্যবসায়নীতির অংশ ব্যাংক ও মুদ্রা ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ব্যবস্থাপনার প্রকৃতি, বাণিজ্যিক ব্যাংক নীতিমালা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখা।
সাধারণ জ্ঞান
সম্প্রতি জাতীয়-আন্তর্জাতিক চলতি ঘটনা, দেশ ও বিশ্বের ভূ-প্রকৃতি, আয়তন, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি, সংস্থা, পুরস্কার-চুক্তি গত কয়েক বছরের সব ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকা। নিয়মিত পত্রিকা পড়া, সংবাদ শোনা-দেখা জরুরি।
মক-টেস্ট ও প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ
প্রস্তুতির মূল্যায়ন ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য মক-টেস্টের বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রে গত বছরের প্রশ্নপত্র দেখে বারবার আসা বিষয়সমূহ চিহ্নিত করুন। টাইমার দিয়ে মক-টেস্ট দিন এবং সময়সীমার মধ্যে প্রশ্ন সমাধানের অভ্যাস করুন। পরীক্ষার পর নিজের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সময়ে সেসব থেকে শিখুন।
মনোবল ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে প্রস্তুতি সহজ হয়। এর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম (৬-৭ ঘণ্টা), সুষম আহার ও হালকা ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ঘোরাঘুরি থেকে একটু বিরতি নিন। পড়ার সময় যেন মনোসংযোগ হারিয়ে না যায়। নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করুন। অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে নিজেকে তুলনা না করা ভালো।
গুচ্ছ ও ইউনিটভিত্তিক প্রস্তুতি
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে, তাই প্রস্তুতিতে এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
ইউনিট কাঠামো : বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (যেমন : ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী) সাধারণত ইউনিট অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নেয়।
গুচ্ছ পদ্ধতি : বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হয়। আপনার প্রস্তুতি এই ধরন অনুযায়ী হতে হবে।
বিকল্প প্রস্তুতি : শুধু এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে মন না দিয়ে নিজেকে কয়েকটি বিকল্প ইউনিট/বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও প্রস্তুত রাখুন।
সামসাময়িক তথ্য ও জরুরি পরিপ্রেক্ষিত
ভর্তি পরীক্ষা শুধুই পড়াশোনা নয়, সময় ব্যবস্থাপনা, চাপ নিয়ন্ত্রণ, দ্রুত উত্তর দেওয়ার দক্ষতা সব মিলিয়ে জয়ের জন্য জরুরি। পড়াশোনা শুরু করার জন্য অপেক্ষা না করে সময়মতো শুরু করুন। কোচিং বা গাইডেন্স সেন্টার সহায়ক হতে পারে। তবে নিজে পড়াই সবচেয়ে বড় বিষয়। সাধারণ জ্ঞানে নতুন ইউনিট বা বিষয় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সংবাদ-মিডিয়া ও গঠনমূলক পড়াশোনার মাধ্যমে আপ-টু-ডেট থাকা জরুরি। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি দিতে চান, তার নিয়ম, ইউনিট কাঠামো, সিলেবাস, সময়সূচি ভালোভাবে দেখে নিন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন