মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

১৩ লাখ গ্রাহকের বিমা দাবি পাওনা

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

১৩ লাখ গ্রাহকের বিমা দাবি পাওনা

সময়মতো দাবি পরিশোধ না করায় ব্যাপক আস্থাহীনতার কারণে সংকটে পড়েছে বিমা খাত। গত বছর দেশের ৩৬ জীবন বিমা কোম্পানির ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৩টি দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে পরিশোধ হয়েছে ১৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫২টি। অর্থাৎ এখনো ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫১টি বিমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে। অর্থাৎ ৪৫ শতাংশ বিমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে। গ্রাহকের অপরিশোধিত বিমা দাবির পরিমাণ ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অপরদিকে ৪৬টি নন লাইফ বিমা কোম্পানির ২০ হাজার ২৯৮টি দাবি পরিশোধ করা হয়নি। সব মিলিয়ে বিমা খাতে অপরিশোধিত রয়েছে ৬ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। গ্রাহকদের অভিযোগ, পলিসির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন-চার বছর কেটে গেলেও কোম্পানি থেকে টাকা পাওয়া যায় না। বিমা কোম্পানিগুলো নথিপত্রের ঘাটতি, পুনঃবিমা, সার্ভে রিপোর্ট না পাওয়াসহ নানা ইস্যুতে সময়ক্ষেপণ করে। অনেক ক্ষেত্রে এক কোম্পানির এজেন্ট অন্য কোম্পানিতে চলে যান। সে কারণেও গ্রাহককে ভোগান্তি পোহাতে হয়। 
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪ সালে দেশের ৪৬টি নন-লাইফ, অর্থাৎ সাধারণ বিমা কোম্পানির কাছে গ্রাহকের পাওনা ৩ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো পরিশোধ করেছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছর শেষে ২০ হাজার ২৯৮ গ্রাহকের ২ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকার বিমা দাবি পরিশোধ হয়নি। 
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত ৩৬ জীবন বিমা কোম্পানির ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬০৩টি দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে পরিশোধ হয়েছে ১৫ লাখ ৮২ হাজার ১৫২টি। অর্থাৎ এখনো ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫১টি বিমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে। অর্থাৎ ৪৫ শতাংশ বিমা দাবি অপরিশোধিত রয়েছে। গ্রাহকের অপরিশোধিত বিমা দাবির পরিমাণ ৪ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিমা খাতে অপরিশোধিত রয়েছে ৬ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম আসলাম আলম বলেন, সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধ না করায় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে গত ১৪ বছরে শুধু জীবন বিমায় ৫৪ লাখ পলিসি কমে ২০২৪ সাল শেষে চলমান পলিসি নেমেছে ৭১ লাখে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ছাড়া আস্থা বাড়বে না। সময়মতো দাবি পরিশোধ, মানুষের আস্থা বাড়াতে বিভিন্ন আইন ও বিধি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ। ব্যাংক রেজল্যুশনের আদলে বিমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আলোকে শুধু বিমা প্রতিষ্ঠান একীভূত হবে, তেমনটি নয়। অবসায়ন, অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি বা আইডিআরএর ২০২৪ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, দেশে এমন সাতটি জীবন বিমা কোম্পানি আছে, যাদের নিট সম্পদ হাজার কোটি টাকারও বেশি, তবুও শতভাগ বিমা দাবি পরিশোধ করছে না। মেটলাইফের (পূর্বের আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স) সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এককভাবে ১৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার নিট সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তারপরও কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকের পাওনা ৬৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে বাকি ছয়টি কোম্পানির সম্মিলিত নিট সম্পদ প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। সেই কোম্পানিগুলোর কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার বেশি। বিমা খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকের পাওনা দ্রুত আদায়ে আইডিআরএ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সম্পদ বিক্রির অনুমোদন দিতে পারে। বিমা আইনে এমন বিধান দেওয়া আছে। 
বিমা কোম্পানিগুলোর এমডিদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান মুখ্য কর্মকর্তা এম নুরুজ্জামান বলেন, কয়েকটি বিমা কোম্পানির কাছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে সত্য। কিন্তু এগুলো বিক্রি করাই সমাধান নয়। কারণ সম্পদ বিক্রি করে যদি গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে সেই কোম্পানি চলবে কীভাবে। তবে কোম্পানি যদি দীর্ঘ সময় ধরে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ না করে, তাহলে আইডিআরএ অনুমোদন সাপেক্ষে সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারে। এই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক পলিসি করার পরের মাসেই তাকে বিমা দাবি পরিশোধ করতে হয় না। কোম্পানিগুলোর উচিত- প্রিমিয়ামের টাকা সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করা। স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ করলেও মেয়াদ শেষে যাতে গ্রাহকরা তার পাওনা বুঝে পান, সেটি নিশ্চিত করা উচিত। 
আইডিআরএ তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে ডিসেম্বর পর্যন্ত জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে মোট বিমা দাবি ছিল ৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটির নিট সম্পদ আছে ৫৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ আছে ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার। অথচ এই কোম্পানির কাছে গ্রাহকদের পাওনা ১৫৮ কোটি টাকা। জীবন বিমা করপোরেশনের সম্পদ আছে ৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার। কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকের বিমা দাবির পরিমাণ ৬৫১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৫৭২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অনিষ্পত্তিকৃত বিমা দাবি ৭৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে নিট সম্পদ আছে ৬ হাজার ৭৯৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার। কোম্পানিটির কাছে গ্রাহকের বিমা দাবি অনিষ্পন্ন আছে ৯৭ কোটি ২ লাখ টাকা। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নিট সম্পদ আছে ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকার। কোম্পানির কাছে বিমা দাবি আছে ৩৬২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। দাবি পরিশোধ করা হয়েছে ৩৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ আছে ১১৩ কোটি ৫ লাখ টাকার। কোম্পানিটির কাছে বিমা দাবি আছে ৮৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকার, পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সম্পদ আছে ২৭৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। এই কোম্পানির কাছে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমা দাবি আছে ২০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। 
সম্পদ বিক্রি করার বিষয়ে বিমা আইন, ২০১০-এর ২০-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), লিখিত নোটিশে কোম্পানিকে তার পলিসির বিপরীতে পর্যাপ্ত অর্থ ও সম্পদ আছে কি না সে বিষয়ে তথ্য চাইতে পারবে। এবং ৪১-এর (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোম্পানিগুলোর সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) থাকবে’।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!