ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুটপাট ও অব্যবস্থাপনার কারণে আর্থিক সংকটে পড়া আরও তিনটি ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে একটি আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান। আইএফআইসি, ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংকÑ এই তিন ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাদের একীভূত, অধিগ্রহণ, অবসায়ন বা পুঁজি সহায়তার মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হবে কিনা। এই নিরীক্ষার দায়িত্ব পেয়েছে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট, যারা ইতোমধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছে। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয় ধাপে আরও ১১টি ব্যাংকে সম্পদের মান যাচাই (একিউআর) করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই কাজের অর্থায়ন করছে বিশ্ব ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট ১১টি ব্যাংক হলোÑ এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি, এনআরবিসি, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ইউসিবি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই নিরীক্ষার মাধ্যমে এসব ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ, পুঁজির ঘাটতি, গচ্ছিত টাকার হিসাবসহ বিভিন্ন আর্থিক তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জানা যাবে, এসব ব্যাংককে একীভূত করতে কত পুঁজি প্রয়োজন।
এর আগে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক দুটি প্রতিষ্ঠানÑ আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ও কেপিএমজি মোট ছয়টি ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই করে। আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং কাজ করেছে এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে; আর কেপিএমজি নিরীক্ষা করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকে। এই ছয় ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাদের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ পূর্বের হিসাবের তুলনায় চার গুণ বেশি।
আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের মালিকানা বিদেশিদের হাতে থাকায় আপাতত একীভূতকরণের প্রক্রিয়া থেকে ব্যাংকটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককে একত্র করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকারের কাছ থেকে পুঁজি সহায়তা হিসেবে চাওয়া হবে। বাকি অর্থ যোগান দেওয়া হবে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে ঋণ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর সহায়তা নিয়ে। খুব শিগগিরই প্রস্তাবিত এই রূপরেখা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন