ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

সিগারেটে ভ্যাট বৃদ্ধি - বিক্রি কমলেও বেড়েছে রাজস্ব

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
রাজস্ব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রায় একশটি পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপ করে। এসব পণ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে পরিচিত সিগারেট। তবে বছরের মাঝপথে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রাজস্ব আহরণকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। 

সমালোচনার কারণে বেশকিছু পণ্য ও সেবার ওপর থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। তখন সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেও বাড়তি ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়। সিগারেটের ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করেন তারা। সরকারের রাজস্ব আয় কমেনি, উল্টো বেড়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সিগারেট বিক্রি কমলেও সরকারের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২৪-২৫ বিদায়ী অর্থবছরে সিগারেট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ১.৪৮ শতাংশ। রাজস্ব আয় বাড়লেও প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.৪৬ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এ হার ছিল ১১.৯৪ শতাংশ। 

সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে তামাকজাত পণ্য থেকে। কোম্পানিগুলোর কর্তৃপক্ষ ভ্যাট কমানোর দাবি জানালেও কাজে আসেনি। যার কারণে বছরের মধ্যবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলোর সিগারেট বিক্রির পরিমাণ কমেছে প্রায় এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। সিগারেট বিক্রি হলেও সরকারের রাজস্ব আয় কমেনি, বরং বেড়েছে। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সিগারেটের মানের ওপর ভিত্তি করে চারটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। উৎপাদিত সিগারেট প্রিমিয়াম, হাই, মিডিয়াম এবং লো শ্রেণিকরণ করা করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সব শ্রেণির সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়। এরমধ্যে লো-ক্যাটাগরির সিগারেটের ওপর ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়েছে। বাকি তিনটি ক্যাটাগরির সম্পূরক শুল্ক দেড় শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭ শতাংশ করা হয়। 

চরতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারের আরোপিত শুল্কে সিগারেটের প্যাকেটের দামও বাড়ে। প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির সিগারেটের প্যাকেটপ্রতি মূল্য ১৬০ থেকে বাড়িয়ে ১৮৫ টাকা, হাই ক্যাটাগরি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, মিডিয়াম ক্যাটাগরি ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং লো ক্যাটাগরি ৫০ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। 

মূল্য বৃদ্ধির কারণে সার্বিকভাবে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ এক-চতুর্থাংশের বেশি কমেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি কমেছে লো-সেগমেন্টের সিগারেট বিক্রি। এ খাতের সিগারেট বিক্রি কমেছে ৪৪ শতাংশেরও বেশি। আগের অর্থবছরে লো-সেগমেন্টের সিগারেট বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৮০০ কোটির বেশি শলাকা। গত অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ কোটির বেশি শলাকা। ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে প্রিমিয়াম ও হাই সেগমেন্টের সিগারেট বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ২১.৩৪ শতাংশ ও ৩৬.৯৩ শতাংশ। 

তবে মিডিয়াম সেগমেন্টে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৬০.৭২ শতাংশ। সবমিলে চার সেগমেন্টে বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) সিগারেট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৮৭০ কোটি শলাকা। আগের অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি শলাকা। সে হিসাবে সিগারেট বিক্রি কমেছে ২৫.৬৬ শতাংশ।  

এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, মিডিয়াম সেগমেন্টের সিগারেটের বিক্রি প্রায় ৬১ শতাংশ বাড়লেও এই সেগেমেন্টের সিগারেট বিক্রি থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৯১ শতাংশেরও বেশি। অপরদিকে প্রিমিয়াম, হাই ও লো গ্রেডের সিগারেটে সরকারের রাজস্ব আয় কমছে যথাক্রমে ১০ শতাংশ, প্রায় ২৯ শতাংশ ও ২৪ শতাংশ।