বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০৫:০৪ এএম

তিন মাসে সোয়া ৩ লাখ পলিসি তামাদি

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০৫:০৪ এএম

তিন মাসে সোয়া ৩ লাখ পলিসি তামাদি

সময়মতো প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে পলিসি বাতিল বা তামাদি হওয়া গ্রাহকদের সংখ্যা। দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানি থেকে ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পলিসি তামাদি বা বন্ধ করেছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৬৬ জন গ্রাহক। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ত্রৈমাসিক হিসাবে পলিসি বন্ধ করেছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৬৬ জন গ্রাহক। আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি পলিসি তামাদি হয়েছে সোনালী লাইফে। কোম্পানিটির পলিসি তামাদি হয়েছে ৭৩ হাজার ২৬৭টি। পলিসি তামাদিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ, এর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৭৬৩। ২০২৩ সালে তামাদি হওয়া জীবন বিমা পলিসির সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার। ২০২৪ সালে পলিসি বন্ধ করেছেন ১২ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৮ জন গ্রাহক।

‘তামাদি’ একটি আরবি শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ কোনো কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া। বিমা ব্যবসার সঙ্গে তামাদি শব্দটি বহুল পরিচিত। পলিসি হোল্ডার যদি সময়মতো প্রিমিয়াম জমা না দেন, তাহলে নির্দিষ্ট সময় পরে পলিসিটি তামাদি বা বন্ধ হয়ে যায়। আর পলিসি বন্ধ হলে গ্রাহক বিমা কভারেজ থেকে বঞ্চিত হন। অনেক ক্ষেত্রে জমা দেওয়া টাকাও ফেরত পান না।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যাংক, ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) ও পুঁজিবাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে বিমা খাত। তবে বিভিন্ন কারণে সম্ভাবনাময় এই খাত ‘অনাস্থায়’ নিমজ্জিত। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ থাকলেও ফিরছে না শতভাগ আস্থা। উপরন্তু, পুরো খাতে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। এর সঙ্গে বছর বছর পলিসি তামাদি বা বন্ধ হওয়ায় সংকট দীর্ঘ হচ্ছে।

পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়ার জন্য বিমা খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কয়েকটি কারণের কথা বলছেন। তাদের মতে, জীবন বিমা কোম্পানির প্রতিনিধিরা (এফএ) পলিসি খোলার জন্য যতটা মনোযোগী থাকেন, পরে আর সেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। পলিসি গ্রাহকদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও রয়েছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ। অসাধু শ্রেণির বিমা প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়াম নিয়ে তা আত্মসাতের ঘটনাও রয়েছে।

আইডিআরএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন প্রান্তিকে জীবন বিমা কোম্পানিগুলো মোট বিমা দাবির মাত্র ৩৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করেছে। অনিষ্পন্ন আছে ৬৫ শতাংশ বিমা দাবি। ২০২৪ সালের শেষে জীবন বিমার উত্থাপিত দাবির মাত্র ৫৭ শতাংশ নিষ্পত্তি করেছিল, যা ২০২৩ সালে ছিল ৬৫ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে মোট বিমা দাবির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যার মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৯৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের জুন প্রান্তিকে পলিসি তামাদিতে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেলটা লাইফ। এই কোম্পানির তামাদি পলিসির সংখ্যা ২৭ হাজার ৩৭৬। তামাদিতে এর পরেই রয়েছে মেটলাইফ বাংলাদেশ। বিদেশি এই কোম্পানির পলিসি তামাদি হয়েছে ২০ হাজার ২৭৮টি।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আকিজ তাকাফুল লাইফের ২ হাজার ৬৯২টি, আলফা ইসলামী লাইফের ১৩ হাজার ৩৫৭টি, আস্থা লাইফের ১ হাজার ৪৯০টি, বায়রা লাইফের ৪২১টি, বেঙ্গল ইসলামি লাইফের ৭ হাজার ৭১৯টি, বেস্ট লাইফের ১ হাজার ৫৮০টি, চার্টার্ড লাইফের ৪ হাজার ১৭৫টি, ডায়মন্ড লাইফের ৬৫৮টি, ফারইস্ট লাইফের ৮৩৬টি, গোল্ডেন লাইফের ৬ হাজার ৭৬৮টি, গার্ডিয়ান লাইফের ৭ হাজার ৬৮টি, হোমল্যান্ড লাইফের ২ হাজার ৩২৭টি, যমুনা লাইফের ১৪০টি, জীবন বীমা করপোরেশনের ৩ হাজার ৮৭৫টি, এলআইসি বাংলাদেশের ৪০৭টি, মেঘনা লাইফের ৪ হাজার ৩১৪টি, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের ৪ হাজার ৮৮৮টি, এনআরবি ইসলামিক লাইফের ৫ হাজার ৪০২টি, পদ্মা ইসলামী লাইফের ১ হাজার ৭৫টি, পপুলার লাইফের ১৭ হাজার ৩৪৮টি, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১৮ হাজার ৯০৮টি, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১ হাজার ৬২১টি, প্রোগ্রেসিভ লাইফের ৩ হাজার ৪৭টি, প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফের ১ হাজার ১০টি, রূপালী লাইফের ১০ হাজার ৬১২টি, সন্ধানী লাইফের ২ হাজার ৭৯৮টি, শান্তা লাইফের ৯টি, সানলাইফের ১ হাজার ৩০টি, স্বদেশ লাইফের ১৬ হাজার ৬২৫টি, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের ৫ হাজার ১০৯টি এবং জেনিথ ইসলামী লাইফের ১ হাজার ২৭৩টি পলিসি তামাদি হয়েছে।

আইডিআরএর তথ্য বলছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬ লাখের বেশি জীবন বিমা পলিসি বাতিল বা তামাদি হয়েছে। ২০০৯ সালে মোট সক্রিয় পলিসির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১২ লাখ, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৮৫ লাখ ৮৮ হাজারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক তদারকি, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ, নিয়মিত গ্রাহক সুরক্ষা এবং সহজ সুবিধা চালু না করলে জীবন বিমা খাতে আস্থা ফেরানো কঠিন হবে।

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর প্রতিষ্ঠানটি বেশ কিছু কারণে অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গেছে। এটি গ্রাহকদের আস্থা কমিয়েছে। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে তামাদি পলিসির সংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!