রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়াল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গতকাল রোববার এক বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ২০২৫-২৬ করবছরের ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করে। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, চলতি বছর প্রায় ১৮ লাখের বেশি ব্যক্তি করদাতা অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করেছেন। এনবিআর ব্যক্তি করদাতাদের ই-রিটার্ন সিস্টেম ব্যবহার করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের ২০২৫-২০২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য অনুরোধ করে। একই সঙ্গে ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধনসংক্রান্ত সমস্যার কারণে কোনো করদাতা অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে অসমর্থ হলে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে সুনির্দিষ্ট যৌক্তিকতাসহ আবেদন করা যাবে; এই মর্মে আরও একটি আদেশ জারি করে এনবিআর।
চলতি বছর ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, প্রয়াত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি কর্তৃক রিটার্ন দাখিল এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ছাড়া সব ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ কর বছরে বেশ কয়েক শ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তারা ইচ্ছা পোষণ করলে অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন।
এ ছাড়া করদাতার পক্ষে তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধিও এ বছর অনলাইনে ই-রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতাদের ক্ষেত্রে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও তার পাসপোর্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ই-মেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি তথ্য বৎবঃঁৎহ@বঃধীহনৎ.মড়া.নফ ই-মেইলে পাঠানো-পূর্বক আবেদন করলে আবেদনকারীর ই-মেইলে ওটিপি ও রেজিস্ট্রেশন লিংক পাঠানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতারাও ই-রিটার্ন সিস্টেমে রেজিস্ট্রেশন সহজেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারছেন। এনবিআর জানায়, কোনো রকম কাগজপত্র বা দলিলাদি আপলোড না করে করদাতারা তাদের আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের প্রকৃত তথ্য ই-রিটার্ন সিস্টেমে এন্ট্রি করে সহজে ঝামেলাহীনভাবে ঘরে বসেই ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) মাধ্যমে অনলাইনে আয়কর পরিশোধ করে ই-রিটার্ন দাখিল করে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ-পূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট নিতে পারায় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতার কাছে ই-রিটার্ন দাখিল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়া সহজবোধ্য করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের মতো এ বছরও করদাতাদের অনলাইন রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। করদাতারা ছাড়াও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বছর করদাতার ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি তথা আয়কর আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস ও চার্টার্ড সেক্রেটারিজদেরও ই-রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ই-রিটার্ন-সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় করদাতাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি কল সেন্টার স্থাপন করে। ওই কল সেন্টারের নম্বরে ফোন করে করদাতারা ই-রিটার্ন-সংক্রান্ত প্রশ্নের তাৎক্ষণিক টেলিফোনিক সমাধান পাচ্ছেন।
এ ছাড়া ওয়েবসাইটের ই-ট্যাক্স সার্ভস অপশন থেকে করদাতারা ই-রিটার্ন-সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা লিখিতভাবে জানালে তার সমাধান পাচ্ছে। সারা দেশের সব কর অঞ্চলে স্থাপিত ই-রিটার্ন হেল্প-ডেস্ক থেকে অফিস চলাকালীন ই-রিটার্ন দাখিলবিষয়ক সব সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। করদাতারা নিজ নিজ কর অঞ্চলে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অথবা টেলিফোনের মাধ্যমে ই-রিটার্ন দাখিলসংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করছেন।

