ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রঙের খেলায় শৈশবের উৎসব

মেহরুন নিশি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু হবে আর কিছুদিন পর থেকেই। শারদীয় দুর্গোৎসবের রঙিন আবহ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ইতোমধ্যেই। যেকোনো উৎসবের দিনে মানুষের উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে চারদিক, পূজার ক্ষেত্রেও তাই। তবে এই আনন্দে বড়দের চেয়ে ছোটদের উচ্ছ্বাসই যেন বেশি। নতুন পোশাক, বাহারি সাজগোজ, মেলায় যাওয়া নিয়েই তাদের উৎসবের আনন্দ পূর্ণতা পায়। শিশুরা যখন মায়ের হাত ধরে ম-পে যায় কিংবা বাবা-মার সঙ্গে মেলায় ঘুরে বেড়ায়, তখন তাদের উচ্ছ্বসিত মুখটাই যেন পূজার সবচেয়ে বড় রং। তাই এই উৎসবের আগে ছোটদের সাজসজ্জা আর পোশাক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাবা-মায়েরা। নতুন জামা-কাপড়, জুতা, চুলের ক্লিপ, রাবার ব্যান্ড, চুড়ি, মালা; এসব সাজসজ্জা ছাড়া বাচ্চাদের পূজার আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ।

শিশুদের পোশাক বাছাই

শিশুদের পোশাক কেনার সময় প্রথমেই যেটি মাথায় রাখতে হবে, তা হলো আরাম। বাচ্চারা চঞ্চল হয়, তাই খুব টাইট বা ভারী পোশাক তাদের চলাফেরায় বাধা তৈরি করতে পারে। পোশাক ও জুতা অবশ্যই মাপ মতো হতে হবে; যাতে তারা নিশ্চিন্তে দৌড়াতে, খেলতে বা নাচতে পারে। গ্রীষ্ম, বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এলেও- এখনো গরম বিদায় নেয়নি। তাই সুতি কিংবা লিনেনের হালকা কাপড় সবচেয়ে উপযোগী হবে। পাশাপাশি বাতাস চলাচল করতে পারে এমন ঢিলেঢালা পোশাক শিশুদের জন্য আরামদায়ক হবে।

মেয়ে শিশুদের পোশাক

মাকে সাজতে দেখে মেয়েরাও সেজে উঠতে চায়। তাদের জন্য বাজারে এখন নানা ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায়। ফ্রক ও গাউন সুতি বা লিনেনের হালকা ফ্রক বা গাউন হতে পারে সেরা পছন্দ। গরমে আরাম পাওয়া যাবে, আবার ডিজাইনও হবে আকর্ষণীয়। সুতার কাজ করা, পুঁতি কিংবা সিকুইন দিয়ে সাজানো ফ্রক বা গাউন পূজার দিনে বিশেষ লুক দেবে।

টপস ও স্কার্ট

হালকা টপসের সঙ্গে শর্টস্কার্ট শিশুদের জন্য একেবারে পারফেক্ট। এতে চলাফেরায় কোনো অসুবিধা হয় না, আবার সাজও জমে ওঠে।

সালোয়ার কামিজ ও লংস্কার্ট

ব্লক বা অ্যাম্ব্রয়ডারি করা সালোয়ার কামিজ কিংবা লংস্কার্টে ছোট্ট মেয়েটিকে রূপকথার রাজকন্যার মতো লাগবে।

সাজসজ্জা

শিশুদের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় ভারী প্রসাধন একেবারেই ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে মুখে বেবি পাউডার, ময়েশ্চারাইজার আর চাইলে হালকা ব্লাশঅন ব্যবহার করা যেতে পারে। নখে হালকা রঙের নেলপলিশ দিলে তাদের খুব ভালো লাগে। ঠোঁটে একেবারে হালকা রঙের লিপস্টিক দেওয়া যেতে পারে। হাতে কাচের বদলে প্লাস্টিক বা হালকা ধাতব চুড়ি পরানো নিরাপদ। গলায় রঙিন পুতির মালা আর কপালে টিপে ছোট্ট রাজকন্যার সাজ যেন আরও ফুটে ওঠে। চুল বাঁধতে পারেন পোনিটেল বা বেণি করে। চাইলে খোলা চুলে রাউন্ড ব্যান্ড কিংবা রঙিন ক্লিপ ব্যবহার করা যাবে। আর অবশ্যই পোশাকের সঙ্গে মানানসই ব্যাগ ও জুতা পরাতে ভুলবেন না। কার্টুন বা পুতুলের ছবি আঁকা ছোট ব্যাগ তাদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ছেলে শিশুদের পোশাক

ছেলেরা পোশাকে খুব বেশি বায়না না করলেও পূজার আনন্দে তাদের জন্য বিশেষ কিছু অবশ্যই থাকা উচিত।

শার্ট ও প্যান্ট

হালকা সুতি শার্টের সঙ্গে জিন্স বা ট্রাউজার সবসময়ই জনপ্রিয়। উজ্জ্বল রঙের চেক বা প্রিন্টেড শার্ট শিশুদের অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে।

টি-শার্ট ও প্যান্ট

ক্যাজুয়াল সাজ চাইলে রঙিন টি-শার্টের সঙ্গে ট্রাউজার বা থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট বেশ মানানসই। গরমে এগুলো আরামদায়কও বটে।

পাঞ্জাবি ও কুর্তা

উৎসবের আবহে ঐতিহ্যের ছোঁয়া দিতে চাইলে হালকা সুতি বা লিনেনের পাঞ্জাবি কিংবা কুর্তা হতে পারে আদর্শ পোশাক। এর সঙ্গে মানানসই সাদা পায়জামা বা ডেনিম জিন্স ছেলেদের সাজকে অন্য মাত্রা দেয়।

সাজসজ্জা

ছেলেদের জন্য আলাদা প্রসাধনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা রঙের ক্যাপ, ঘড়ি বা বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। জুতার ক্ষেত্রে আরামদায়ক স্যান্ডেল বা কেডস বেছে নেওয়া ভালো।

নিরাপত্তা ও আরাম

শিশুদের সাজসজ্জায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপত্তা। তাদের কখনই সোনার বা রুপার অলঙ্কার পরানো উচিত নয়। এতে জিনিস হারানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থেকে যায়। সবসময় হালকা ও নিরাপদ জিনিস ব্যবহার করাই শ্রেয়। আরেকটি বিষয় হলো আরাম। পূজার দিনে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে থাকতে হয়। তাই তাদের পোশাক যেন বাতাস চলাচল করতে পারে এমন হয়। এবং জুতাও যেন আরামদায়ক হয়। এতে করে তারা বিনা বাধায় পূজার আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।