ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা, রাজশাহীতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম
দম ফেলার ফুরসত নেই প্রতিমা শিল্পীদের। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী জেলা ও মহানগরী মিলে এবার মোট ৫৩৫টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। হিন্দু ধর্মের বৃহত্তম এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজশাহীর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। বাড়ি বাড়ি প্রতিমা বানানো হচ্ছে। বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে প্রস্তুতি।

রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া ধর্মসভায় শিল্পী বৈদ্যনাথ পাল ও পোরলাদ পাল প্রতিমা বানাচ্ছেন। শ্রমিকরা প্রতিমায় কাদামাটি দিচ্ছেন, কেউ পলিশ করছেন, আবার কেউ রঙের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রতিমা শিল্পী চিরঞ্জিত রায় জানান, প্রতিমায় মাটি দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন ডিজাইন পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোথাও ত্রুটি থাকলে সংশোধন করা হবে। এরপর শুরু হবে রঙের কাজ। একেকটি প্রতিমায় রঙ করতে দুই দিন সময় লাগে। সময়ের চাপ থাকায় দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে।

অন্য প্রতিমা শিল্পী কার্তিক কুমার বলেন, এ বছর তারা ২৫টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। প্রতিটি প্রতিমা বানাতে খরচ গত বছরের তুলনায় ২-৩ হাজার টাকা বেড়েছে।

তিনি জানান, তিন মাস আগে থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করতে হয়েছে। নইলে সময়মতো প্রতিমা ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হতো না।

প্রশাসন জানিয়েছে, পূজা উপলক্ষে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি র‌্যাব টহল দেবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এ ছাড়া নিরাপত্তার কাজে স্বেচ্ছাসেবকরাও নিয়োজিত থাকবে।

রাজশাহী মহানগরীতে এবার মোট ৮০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় ৫৮টি এবং অন্য থানাগুলোতে ২২টি মণ্ডপে পূজা হবে। নগরীতে ধর্মসভাসহ ৫টি স্থানে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি মণ্ডপে ৬ জন আনসার ও ৩ জন পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার সাহা জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ কমিশনার ও আনসার প্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এবারের দুর্গাপূজা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও উৎসবমুখর হবে।

একই সংগঠনের রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক সেন্টু সাহা জানান, পূজা সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও মিটিং করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৪৫৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধূ বলেন, সারাদেশে সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সরকার পূজা মণ্ডপগুলোর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। রাজশাহীতেও ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবারের পূজা শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. গাজিউর রহমান জানান, মহানগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। প্রতিটি থানার পুলিশও সতর্ক থাকবে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই।