নিজেদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায় দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মহালয়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকার ম-পগুলোতে চলছে দেবী বরণের জোর প্রস্তুতি।
রাজধানীর শারদীয় উৎসবের কথা বলতে গেলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শাঁখারীবাজারের কথা। পূজার সব অনুষঙ্গই মেলে এখানে। সারা দেশ থেকে পূজার সরঞ্জামাদি কেনার জন্য এখানে আসেন সারা দেশের দোকানদাররা। তাই পূজার মাসখানেক আগে থেকে সরগরম থাকে শাঁখারীবাজার। পুরান ঢাকার ম-পগুলোতে দেখা মিলেছে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিশেলে সংস্কৃতি, সামাজিকতা আর ইতিহাসের মিলনমেলার আয়োজন।
সরেজমিন পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের ম-পগুলো ও আশপাশের জমে ওঠা পূজার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ম-পেই চলছে সাজসজ্জার কাজ। তৈরি করা হচ্ছে সুসজ্জিত তোরণ। এ ছাড়া উৎসবের মাত্রা বাড়াতে করা হচ্ছে লাইটিং। প্যান্ডেল তৈরিতে বৃষ্টির পানি জন্য দেওয়া হচ্ছে ত্রিপল। আর প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ করে রং-তুলির কাজ শুরু করার অপেক্ষায় প্রতিমাশিল্পীরা।
পুরান ঢাকার দুর্গাপূজা মানেই ঐতিহ্য। এখানকার অধিকাংশ পূজাম-প শতবর্ষী। এখানে পূজা মানেই শুধু ম-পে ম-পে ঘোরাঘুরি না; এটি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মিলনমেলা। আগামী রোববার ষষ্ঠী। তার আগেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। তাই ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা হচ্ছে ধুমছে। দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য হিন্দুধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব সামগ্রীই পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ শাঁখা, সিঁদুর, ধূপ, ধুনো, ফুল, ফল, প্রদীপ, ধূপকাঠি, নৈবেদ্য এবং প্রতিমার সাজসজ্জার সামগ্রীসহ পূজার প্রায় ১০০ ধরনের উপকরণ। এই উপকরণগুলোর মধ্যে হলো দুর্গাপূজার জন্য আলতা, সিঁদুর, শাঁখা, পলা, টিপ, নতুন শাড়ি, নতুন ওড়না, কান, হাত ও গলার গয়না, মাটির ঘট, মহাস্নান সামগ্রী, প্রতিমা সাজানোর উপকরণ (যেমনÑ মুকুট, জরি, চুমকি), মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতলের সামগ্রী এবং শোলার সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পূজার সকল প্রকার উপকরণ, যা সাধারণত ১০০টির বেশি হতে পারে, সেগুলো সহজেই পাওয়া যায়, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। এটায় মূল পাইকারি বাজার। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পণ্য যায়।
এই মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিমার আকৃতির কাজ শেষ হয়েছে। এরপর রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হবে দেবীকে। ষষ্ঠীর আগেই সব কাজ শেষ হবে আশা করা যায়। এদিকে পূজাম-পগুলোতে চলছে জোর নিরাপত্তা প্রস্তুতি। ম-পগুলোতে সিসিটিভি, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও স্বেচ্ছাসেবক টিম রাখা হচ্ছে।
ফরাশগঞ্জ শিব মন্দির ঘুরে দেখা যায়, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই। এরপরও আমরা নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। সিসিটিভি ক্যামেরা, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও স্বেচ্ছাসেবক টিম রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসন ও পুলিশ সাবর্ক্ষণিক যোগযোগ রাখছে।