ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫

অ্যালোভেরার যত গুণ

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০১:২৪ এএম

এখন অনেকেই বাসার ছাঁদে বা বারান্দায় অ্যালোভেরার গাছ লাগিয়ে থাকেন। অ্যালোভেরা যেমন রূপচর্চায় ব্যবহার ঠিক তেমনি শরীরের অসুস্থতার জন্য বহুকাল আগে থেকেই প্রচলিত এক প্রাকৃতিক ভেষজ। অনেকেই অ্যালোভেরার শরবত খান নিয়মিত। আবার অনেকে চুলের গোড়া মজবুত করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। এ গাছের পাতা এতটা উপকারী যে- বলে শেষ করা যাবে না। পাতার ভেতরের অংশটা তৈরি হয় পানির দ্বারা। আর এ পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপকারী উপাদান।

যা মানবদেহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গাছের পাতায় আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড, অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি৬ ও বি২ ইত্যাদি। এসব উপাদানগুলো মানুষের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে। অ্যালোভেরার অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে যা রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এ পাতার আরও বিভিন্ন জাদুকরি দিক রয়েছে। এ গাছ মানুষের শরীরে হৃৎযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, মুখের ঘা, পেটের সমস্যা, ত্বকের সুরক্ষা ও আরও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন এক গ্লাস করে এলোভেরা পাতার নির্যাসের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

অ্যালোভেরার উপকারিতা

ওজন নিয়ন্ত্রণে :

অ্যালোভেরা মানুষের শরীরের দ্রুত ওজন কমিয়ে দেয়। এতে মানুষের শরীরের শারীরিক গঠন ঠিক থাকে। অ্যালোভেরায় থাকে অ্যামাইনো অ্যাসিড, এনজাইম আর স্টেরল। যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো শরীরের সঙ্গে মিলিত হয়ে শরীরকে করে তোলে অনেক আর্কষণীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী। অ্যালোভেরার জুস একটু তিতা। তাই এটি ব্লেন্ডার করে শাঁস, পানি, বরফ দিয়ে জুস করে সামান্য মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সেবন করা যায়। এতে চুল ঝরাও বন্ধ হয়।

হার্টের যত্ন:

হৃৎযন্ত্র হলো মানুষের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটির সচলতা ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকবে না। আর এ হৃৎযন্ত্রকে ভালো রাখতে অ্যালোভেরার জুস খাওয়া যায়। অ্যালোভেরার বিশেষ গুণ হলো, এটি শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, সঙ্গে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দূষিত রক্ত শরীর থেকে বের করে রক্ত পুনর্জন্ম হওয়াতে সহযোগিতা করে।

দাঁতের যত্ন:

অ্যালোভেরার জুস দাঁতের জন্য খুবই উপকারী। এটি দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির কোনো ব্যথা হলে তা দূর করে দেয় এবং দাঁতে কোনো জীবাণু বা ক্ষত থাকলে দূর করে দেয়।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে:

পাকস্থলীর হজমশক্তি বাড়াতে অ্যালোভেরা অদ্বিতীয়। এটি শরীরে পরিপাক তন্ত্রের খাদ্য হজমকৃত ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে দ্রুত খাবার হজম হয়ে যায়। যাদের ডায়রিয়া বা আমাশয়ের মতো অসুস্থতা শুরু হয় তাদের জন্য ও অ্যালোভেরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

ত্বকের যত্ন:

ত্বকে অ্যালোভেরার ব্যবহার এবং উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য এমন একটি উপাদান যা কিনা ত্বকের ইনফেকশন দূর করে। যাদের ত্বকে দাগ বা ব্রণের সমস্যা আছে তা দূর করে। প্রসঙ্গত অ্যালোভেরায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লামেনটরি উপাদান। যা ত্বকের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

চুলের যত্ন:

চুলের কোনো সমস্যা হলে তা দূর করতে ত্বকে যদি অ্যালার্জিভাব থাকে অ্যালোভেরার কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এটিকে জেল বানিয়ে চুলে বা ত্বকে ব্যবহারে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান চুল ঝরে যাওয়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। আবার অ্যালোভেরার রসের সঙ্গে আমলকীর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে এতে চুলের উজ্জ্বলতাও বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি:

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ সাধারণ শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হয়ে থাকে। তবে অ্যালোভেরা নিয়মিত পান করতে পারলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এতে করে ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।