ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

শীতে ত্বকের হারবাল যত্ন 

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:২০ এএম

শীত এলেই বাতাসের শুষ্কতা ত্বককে রুক্ষ, খসখসে এবং প্রাণহীন করে তোলে। এ সময় ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে হারবাল উপাদানের যতœ সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। রাসায়নিকমুক্ত এ উপাদানগুলো ত্বককে শুধু আর্দ্র রাখে না, বরং গভীর থেকে পুষ্টিও জোগায়। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে কিছু খাদ্য তালিকার অংশ দিয়ে আমাদের ত্বকের যতœ নিতে পারি। 

গাজর : ত্বকের উজ্জ্বলতার প্রাকৃতিক উৎস

গাজরে থাকা প্রচুর ভিটামিন এ ত্বককে দেয় নরমতা ও স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।

ব্যবহার : সিদ্ধ গাজর পিষে তাতে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০-৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে সুস্থ ও সতেজ। 

টমেটো : দাগ ও মলিনতা দূর করতে কার্যকর

টমেটোতে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও লাইসোপিন, যা ত্বকের দাগ, বলিরেখা ও ব্রণের সমস্যা কমায়।

ব্যবহার : ব্রণে সরাসরি ব্লেন্ড করা টমেটো লাগান। স্ক্রাব চাইলে টমেটো-পুদিনা ব্লেন্ড করে তাতে ৪-৫ চামচ চিনি মিশিয়ে মুখ ও হাতে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে একবার করলেই ত্বক আরও উজ্জ্বল দেখাবে। 

বাঁধাকপি : ত্বকে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা

বাঁধাকপিতে রয়েছে সালফার, ভিটামিন-ডি এবং নানা খনিজ, যা ত্বক আর্দ্রতা রাখতে সহায়তা করে।

ব্যবহার : ভাপানো বাঁধাকপির পানি ফেলে না দিয়ে ঠান্ডা করে মুখ ধোয়ার সময় ব্যবহার করুন। ব্রণ বা বলিরেখার জায়গায় সরাসরি বাঁধাকপির রস লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

লেটুসপাতা : উজ্জ্বলতার গোপন উপাদান

লেটুসে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, জিঙ্ক ও ফলিক অ্যাসিড যা ত্বক উজ্জ্বল রাখতে  অত্যন্ত উপকারী।

ব্যবহার : ব্লেন্ড করা লেটুসপাতার সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে ২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই টের পাবেন সতেজতা।

পালংশাক : গভীর টোনিং ও সতেজতা

পালংশাকে প্রচুর ভিটামিন (অ, ঈ, ঊ, ক) ও খনিজ থাকে, যা ত্বকে গভীর পুষ্টি দেয়।

ব্যবহার : সিদ্ধ পালংশাক ব্লেন্ড করে তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক টোনড ও সতেজ দেখাবে।

প্রাকৃতিক তেল : গভীর ময়েশ্চারাইজিং

নারিকেল, অলিভ, তিল ও বাদাম তেল শীতকালে ত্বকের জন্য দারুণ উপকারী।

গোসলের আগে হালকা গরম তেলে মালিশ করলে শুষ্কতা কমে, ত্বক থাকে নরম ও পুষ্ট।

মধুর আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা

মধু ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং শীতের সংক্রমণ কমায়। ১০-১৫ মিনিট মুখ বা শরীরে মধু লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।

দুধ ও দই : শুষ্ক ত্বকের কোমল যতœ

দুধ বা দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড মৃত কোষ দূর করে এনে দেয় মসৃণতা। শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধ–মধুর ফেসপ্যাক অসাধারণ। দই ত্বকে হালকা গ্লো আনে।

অ্যালোভেরা : শীতের জ্বালা ও রুক্ষতা দূর করে

অ্যালোভেরা ত্বকের জ্বালা, চুলকানি ও শুষ্কতা কমায়। রাতে মুখ পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা  জেল লাগালে সকালে ত্বক থাকে অনেক বেশি সতেজ ও নরম।

হলুদ ও চন্দন : প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ও উজ্জ্বলতা

হলুদের অ্যান্টিসেপটিক গুণ ও চন্দনের ঠান্ডা প্রভাব ত্বকের ব্রণ, র্যাশ ও রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। দুধ বা গোলাপজলের সঙ্গে মিশিয়ে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল।

গোলাপজল : ত্বকের টোনিং

গোলাপজল ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখে, আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতার টান কমায়। টোনার হিসেবে প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়।

প্রাকৃতিক স্ক্রাব : কোমল এক্সফোলিয়েশন

ওটস, বেসন বা চালের গুঁড়ার সঙ্গে মধু বা দুধ মিশিয়ে তৈরি স্ক্রাব শীতে খুব উপকারী।

সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হয়, ত্বক হয় মসৃণ ও উজ্জ্বল।

শীতে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে প্রকৃতির উপাদানের মতো নিরাপদ আর কিছু নেই। গাজর থেকে শুরু করে তেল, গোলাপজল কিংবা অ্যালোভেরা সবই ত্বককে আর্দ্র, সতেজ ও সুস্থ রাখতে চমৎকার কাজ করে। নিয়মিত যতœ নিলেই পুরো শীতজুড়ে ত্বক থাকবে নরম, উজ্জ্বল ও সমস্যা-মুক্ত।