ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি কমছে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৩:৩৩ এএম

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে। আর একক দেশ হিসেবে এই পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক রপ্তানি করে যে আয় হয়, তার ২০ শতাংশের মতো আসে এই দেশ থেকে। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হচ্ছে জার্মানি; ১০ শতাংশের মতো আসে ইউরোপের এই দেশ থেকে। সামগ্রিক হিসাবে পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ যে বিদেশি মুদ্রা আয় করে, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে। কিন্তু উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, ট্রাম্প শুল্কের ধাক্কায় এ দুই বড় বাজারেই পোশাক রপ্তানি কমছে; যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেশভিত্তিক রপ্তানি আয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বড় উল্লম্ফন নিয়ে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শুরু হয়। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭৯ কোটি ৭২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, যা ছিল গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে ২৯ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার। কিন্তু দ্বিতীয় মাস আগস্টে এসেই ধাক্কা খায়; কমে যায় ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ । ওই মাসে ৬৫ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরের আগস্টে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে নামমাত্র প্রবৃদ্ধি হয়; দশমিক ০৬ শতাংশ। রপ্তানি হয় ৫৬ কোটি ৪১ লাখ ডলারের পোশাক। গত বছরের আগস্টে হয়েছিল ৫৬ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে এসে ফের ধাক্কা। রপ্তানি হয় ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক। গত বছরের অক্টোবরে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৬০ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার ডলার।

হিসাব বলছে, গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে উল্লম্ফনের কারণে অর্থবছরের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে এখনো ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। এই চার মাসে দেশটিতে ২৫৮ কোটি ৭১ লাখ ৪০ হাজার (২.৫৯ বিলিয়ন) পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার (২.৪৬ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক আমদানিকারক দেশ জার্মানির অবস্থা আরও খারাপ। এই চার মাসে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে জার্মানিতে ১৪৩ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার (১.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ১৫৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার (১.৫৪ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশের পোশাকের আরেকটি বড় বাজার ফ্রান্সেও রপ্তানি কমেছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই বাজারে ৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ২০ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। যদিও শীর্ষ পাঁচ গন্তব্যের মধ্যে বাকি দুটি দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এখনো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। দেশ দুটি হলো যুক্তরাজ্য ও স্পেন।

জুলাই-অক্টোবর সময়ে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৭২ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ১৫৩ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাক। অন্যদিকে স্পেনে রপ্তানির অঙ্ক ১২৭ কোটি ৭১ লাখ (১.২৭ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বড় দুই বাজারে (যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি) হোঁচটের কারণেই সার্বিকভাবে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমেছে। জুলাই-অক্টোবর সময়ে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির অঙ্ক ছিল প্রায় ৯ শতাংশ।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৩ লাখ ৬০ হাজার (প্রায় ১৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ১০ লাখ (১২.৮১ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক।